
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইসঙ্গে, এ ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ১৫ দফা নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হলের গঠিত তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ঘটনাস্থল ও কক্ষ তল্লাশি, সিসিটিভি ফুটেজ এবং সুরতহাল প্রতিবেদন পর্যালোচনা শুরু করেছে।
তদন্ত কমিটির সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সঠিক কারণ উদঘাটনে রোববার গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে তথ্য আহ্বান করেছে প্রশাসন। এ পর্যন্ত উভয় কমিটি পৃথকভাবে অন্তত ২৫ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। শনিবার উভয় কমিটি ও কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া, সাজিদের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নম্বর কক্ষ তল্লাশি করা হয়েছে এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কললিস্টের রেকর্ড ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চাওয়া হয়েছে।
কমিটির হাতে সুরতহাল প্রতিবেদন এসেছে এবং সোমবার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, এক সপ্তাহের মধ্যে ফরেনসিক প্রতিবেদন পাওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। দ্রুত ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য বিশেষ আবেদন এবং আইসিটি সেলের কাছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ চাওয়া হয়েছে।
এদিকে, শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট এবং ৬ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানিয়েছে। অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে হল ও প্রশাসনের তদন্ত কমিটিতে দুইজন করে শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত করা, ক্যাম্পাসে সিসিটিভি স্থাপন, হলে শিক্ষার্থীদের এন্ট্রি ও এক্সিট মনিটরিংয়ের আওতায় আনা, ক্যাম্পাসের চারপাশে নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট স্থাপন ও বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা। কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে আশ্বাস দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করে। দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।
সাজিদ আব্দুল্লাহর আত্মার প্রতি সমবেদনা ও শিক্ষার্থীদের ১৫ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে রোববার সকালে শোকর্যালি করেছে আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ।
হল তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবদুল গফুর গাজী জানান, তারা ইতোমধ্যে ৮ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার আশা করছেন।
প্রশাসনের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন জানান, তারা ১৭ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব নয়। তদন্ত কমিটিতে শিক্ষার্থী রাখার বিষয়ে কোনো নোটিশ পাননি, যা আইনবহির্ভূত।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী জানান, তারা তদন্ত কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করছেন এবং শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে উদ্যোগ নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে সাজিদ আব্দুল্লাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায়।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর