
পঞ্চগড়ের আটোয়ারিতে মোহাম্মদ আলী নামে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শাহাজাহান আলীর নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই স্বতন্ত্র প্রার্থী। যদিও হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শাহাজাহান আলী। এই ঘটনায় জেলার আটোয়ারি থানায় মামলা দায়ের করেছেন ওই সংসদ সদস্য প্রার্থী। তার বাড়ি পঞ্চগড়ের আটোয়ারি উপজেলার আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের পাল্টাপাড়া গ্রামে। মুহাম্মদ আলী ওই গ্রামের মৃত মফিজউদ্দিনের ছেলে।
অভিযোগ অনুযায়ী, গত ১৮ জুলাই শুক্রবার বিকেলে আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শাহাজাহান আলীর নেতৃত্বে মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে হামলা চালানো হয়। হামলার সময় তার বাড়ির দরজা ভেঙে ঘরের থাই গ্লাস ভেঙে দেওয়া হয় এবং মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও স্ত্রীকে মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে মোহাম্মদ আলীকে জোর করে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে চা বাগানে হত্যার উদ্দেশ্যে গলা চেপে ধরে বেধড়ক মারধর করা হয়। বর্তমানে অভিযুক্ত ওই ইউপি সদস্যের ভয়ে আতঙ্কে দিন পার করছে কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষ। এর আগে ২০২২ সালের দিকে ইউপি সদস্য শাহাজাহান আলীকে গ্রেফতার করতে সিআইডি পুলিশ তার বাড়িতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়।
মামলার এজাহার ও পাল্টাপাড়া গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই বিকেলে ইউপি সদস্য শাহাজাহান আলী তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে মুহাম্মদ আলীর বাড়িতে গিয়ে প্রথমে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী মুহাম্মদ আলীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।
এ সময় চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মুহাম্মদ আলীকে মারধর করতে শুরু করে। মুহাম্মদ আলীর চিৎকারে আশেপাশের বিভিন্ন বয়সী লোকজন ঘটনার ছবি ধারণ করতে থাকে। অপরদিকে শাহাজাহান আলীর লোকজন বাড়ির দরজা ভেঙে বাড়িতে প্রবেশ করে মুহাম্মদ আলীর ঘরে থাই গ্লাস, সিসি ক্যামেরা এবং সার্চ লাইট ভাঙচুর করে। বাড়ির প্রায় লক্ষাধিক টাকার মালামাল এবং নগদ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়।
পরে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে চুরি-ছিনতাই থেকে বাঁচতে মুহাম্মদ আলীর ছেলে খায়রুল ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের বাড়িতে এই হামলার পর বর্তমানে কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শাহাজাহান আলীর ভয়ে আতঙ্কে দিন পার করছেন।
এদিকে হামলার পর মুহাম্মদ আলীকে মারধরের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ভিডিওতে দেখা যায় শাহাজাহান আলী মুহাম্মদ আলীকে জোরপূর্বক ধাক্কা দিচ্ছেন।
অভিযুক্ত আলোয়াখোয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহাজাহান হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, মুহাম্মদ আলী একজন খারাপ প্রকৃতির লোক, তার বিরুদ্ধে আমার কাছে বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। ওইদিনের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আমার কাছে আছে, আমি সময়মতো প্রকাশ করবো। তিনি বলেন, মুহাম্মদ আলী আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে। মুহাম্মদ আলীর বাড়ির পাশে আমি একটি আমবাগান ইজারা নিয়েছি। সেই আমবাগানের রাস্তা নিয়ে তার সাথে মতবিরোধ আছে কিন্তু তিনি তো আমার ভোটার, আমি কেন তার কাছে চাঁদা চাইবো, তার বাড়িতে হামলা করবো।
ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজাক্কারুল ইসলাম কচি জানান, হামলার ঘটনা শুনেছি কিন্তু কে হামলা করেছে জানি না। থানায় মামলা দায়েরের ঘটনাও শুনেছি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আটোয়ারি থানার উপ পরিদর্শক আলাউদ্দিন জানান, এজাহারের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। দুজন আসামি পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে আসামিদের ধরতে চেষ্টা অব্যাহত আছে।
এ বিষয়ে আটোয়ারি থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, এই মামলার বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা বলবেন। আমি সাক্ষ্য দেওয়ার কাজে ছুটিতে আছি।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর