
শেরপুরে চাঁদা না পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে তালা দেওয়া ও স্থানীয় বাজারে চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রদলের দুই নেতাকে পুলিশে দিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুপুরে পুলিশ তাদেরকে শেরপুর আদালতে প্রেরন করেছে। এর আগে বুধবার রাতে লছমনপুর ইউনিয়নের কুসুমহাটি বাজারের লছমনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে তাদের আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়।
তারা হচ্ছেন- লছমনপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর দড়িপাড়া এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে ও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মো. আল আমিন ইসলাম সাগর (২৮) এবং বড় ঝাউয়েরচর এলাকার আলতাব হোসেনের ছেলে ও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. সবুজ আহাম্মেদ (৩৫)। এদিকে চাঁদাবাজির সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ায় আল আমিন ইসলাম সাগরকে ছাত্রদলের সভাপতি ও প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিস্কার করেছে সদর উপজেলা ছাত্রদল।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানান, লছমনপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সবুজ আহাম্মেদ ও বর্তমান স্থগিতকৃত সভাপতি আল আমিন ইসলাম সাগর দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে যান না। তারা বিভিন্নস্থানে দলের নাম করে চাঁদাবাজি করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে আসছেন। বুধবার তারা তাদের কিছু অনুসারী নিয়ে বলাইয়েরচর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে চাঁদা দাবি করেন এবং না পেয়ে লাঞ্ছিত করেন। এছাড়া লছমনপুর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যানের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন ও পরিষদের সচিবসহ অন্যদের বের করে দিয়ে পরিষদের ভবনে তালা দেন।
এছাড়া কুসুমহাটি বাজারে আশপাশের একাধিক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাঁদা দাবি করেন। ফলে দলীয় ভাবমূর্তি রক্ষায় বুধবার রাতে ব্যবসায়ীদের সহায়তায় ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী দলের নেতাকর্মীরা মিলে সবুজ ও সাগরকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। এ ঘটনার পরপরই লছমনপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মো. আল আমিন ইসলাম সাগরকে সভাপতি পদসহ প্রাথমিক সদস্য থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে শেরপুর সদর উপজেলা ছাত্রদল।
বহিষ্কারের বিষয়টি রাতেই নিশ্চিত করেন শেরপুর সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শারদুল ইসলাম মুরাদ ও সদস্য সচিব সুমন আহমেদ। পুলিশের কাছে তাদেরকে সোপর্দ করার সময় তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা জানান, গত ১৭ জুলাই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে মো. আল-আমিন ইসলাম সাগরের সভাপতি পদ স্থগিত করা হয়েছিল।
এদিকে, ওই ঘটনায় লছমনপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও মহিলা দলের নেত্রী আলেয়া বেগম বাদী হয়ে সবুজ ও সাগরসহ ৫ জনকে আসামি করে সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে সবুজ আহম্মেদ ও আল আমিন ইসলাম সাগরসহ একই এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে ছায়দুর রহমান (৩২), লছমনপুর এলাকার মৃত এরশাদ আলীর ছেলে মো. নূর শাহ আলম পাপ্পু (৩৮) এবং ঘিনাপাড়া এলাকার শহিদুল ইসলামের ছেলে মো. নূরনবী ইসলাম (২৫) সহ অজ্ঞাত ৬/৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
লছমনপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ এবং সদস্য সচিব শফিকুল ইসলাম বলেন, এই ছেলেগুলার কারণে আমাদের ও দলের চরম ক্ষতি হচ্ছে। তারা ৫ আগস্টের পর থেকেই বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করতো। দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করতো। তারা লছমনপুর ইউনিয়ন পরিষদে তালা দিয়েছে। আরেক চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিত করেছে। ব্যবসায়ী ফারুকের কাছে চাদা চাইছে, ইদ্রিস কোম্পানীতে গিয়ে চাঁদা চাইছে। এজন্য আমরা তাদেরকে পুলিশের কাছে দিছি। আমরা তাদের বিচার চাই।
লছমনপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শরিফ আল জায়েদ বলেন, চেয়ারম্যানকে না পেয়ে আমাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে পরিষদে তালা মেরে দিয়েছে। কুসুমহাটি বণিক সমিতির সভাপতি এংরাজ আলী মেম্বার বলেন, সবুজ ও সাগরসহ কয়েকজন মিলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও চাদাঁ তুলেছে। তারা দলেরও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। তাই তাদেরকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ পলাশ জানান, বিএনপিতে কোন চাঁদাবাজের ঠাঁই নেই। যে বা যারাই অপকর্মে জড়িত হবে, তার বা তাদের বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবায়দুল আলম বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগে ২ যুবককে আটক করা হয়েছিল। পরে নিয়মিত মামলায় বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর