
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসির পর এবার খুনি হাসিনার ভয়ঙ্কর নৃশংসতা নিয়ে ‘‘হাসিনা – জুলাইয়ের ৩৬ দিন’’ শিরোনামে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশ করেছে আল জাজিরা।
ভারতীয় এই সেবাদাসীর বীভৎসতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। এই প্রামাণ্যচিত্রে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো দমন-পীড়ন এবং এর পেছনের ঘটনাগুলো তুলে আনা হয়েছে।
প্রামাণ্যচিত্রটিতে আল জাজিরার আই (অনুসন্ধানী) ইউনিট হাসিনার গোপন ফোনালাপ ও নথিপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, সাবেক স্বৈরাচার শেখ হাসিনা নিজেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনের জন্য ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ দিয়ে গুলি করে ছাত্র-জনতাকে গণহত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
প্রামাণ্যচিত্রে গোপন ফোনালাপে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমার নির্দেশনা ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। আমি খোলা আদেশ দিয়েছি। এখন তারা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করবে, যেখানেই পাবে গুলি চালাবে।’’আরেকটি রেকর্ডিংয়ে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর নির্দেশনার কথাও শোনা যায়।
আল জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, তিন সপ্তাহ ধরে চলা ছাত্র ও নাগরিক আন্দোলনে কমপক্ষে ১৫০০ জন নিহত এবং ২৫ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। একজন চিকিৎসকও নিশ্চিত করেছেন যে, বহু আন্দোলনকারী হেলিকপ্টার থেকে চালানো গুলিতে নিহত বা গুরুতর আহত হয়েছেন।
প্রামাণ্যচিত্রে আরও দেখানো হয়েছে যে, কীভাবে ছাত্র আবু সাইয়েদকে হত্যার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে সরকার ভয়-ভীতি ও ঘুষের ব্যবহার করেছে। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা পাঁচবার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পরিবর্তন করে গুলির অস্ত্রের উল্লেখ মুছে ফেলার চেষ্টা করেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ইন্টারনেট বন্ধ করে সহিংসতার ছবি বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছানো বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল বলেও গোপন নথিতে উঠে এসেছে।
এর আগে মে মাসে আল জাজিরা ‘‘রিবিল্ডিং বাংলাদেশ ডেমোক্র্যাসি আফটার শেখ হাসিনা’’ শিরোনামে আরেকটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে। এতে হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে পুলিশ ও র্যাব ব্যবহার করে গুম, খুন ও নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধী মত দমন করার চিত্র তুলে ধরা হয়।
কয়েক সপ্তাহ আগে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যুত্থান দমাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রাণঘাতী দমন-পীড়ন চালানোর নির্দেশ যে শেখ হাসিনাই দিয়েছিলেন, ফাঁস হওয়া একটি অডিও টেপ যাচাই করে তার সত্যতা পেয়েছে বিবিসি আই। ওই অডিওতে হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘যেখানেই পাবে, গুলি করবে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, অজ্ঞাতপরিচয় একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনের ফাঁস হওয়া ওই অডিও রেকর্ড এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ, যা দিয়ে বলা যায়, সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা’ হিসেবে জুলাই-আগস্টের ঘটনাপ্রবাহকে বর্ণনা করেছে বিবিসি। তাদের ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের অনুসন্ধানে ঢাকায় বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশি হত্যাযজ্ঞের নতুন কিছু তথ্য উঠে এসেছে, যা আগে এতটা স্পষ্টভাবে আসেনি। এই অনুসন্ধানে মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি পাওয়া গেছে। বিবিসির পর আল জাজিরার এই প্রামাণ্যচিত্র আন্তর্জাতিক মহলেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
সারাবিশ্ব এর সর্বশেষ খবর