
হয়তো স্কুলব্যাগটা পুড়ে গেছে, কিংবা পড়ে ছিল বেঞ্চের নিচে। বইয়ের পাতাগুলোয় ছিল স্বপ্নে ভরা শিশুমনের রঙিন কল্পনা। কিন্তু সেই বেঞ্চে আর কখনও ফিরবে না ১৩ বছরের ছোট্ট শিক্ষার্থী মাকিন সরকার। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এই ছাত্রটি হয়তো সকালবেলা ঘুম ভেঙে ভেবেছিল, আজও ক্লাস শেষে মায়ের হাত ধরে বাড়ি ফিরবে। কিন্তু কেউ জানত না, সেটাই ছিল তার জীবনের শেষ সকাল। উত্তরার সৈয়দপুরে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিমান বিধ্বস্তের করাল ছায়া নিভিয়ে দেয় ফুটন্ত একটি প্রাণ।
বিধ্বস্তের পর তিনদিন ধরে বাঁচার জন্য যুদ্ধ করছিল মাকিন। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে হেরে যায় সে। শুক্রবার (২৫ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে এই সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো বিদ্যালয়ে, পরিবারে ও পরিচিত মহলে।
এ দুর্ঘটনায় আরও বহু মানুষ গুরুতর দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মাইলস্টোন স্কুলের ঘটনায় বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে প্রায় ৫০ জন। এদের মধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছেন ২০ জন। বার্ন ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, ভর্তি ৫ জনের অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন জানিয়েছেন, আহতদের অবস্থা অনুযায়ী আলাদা ক্যাটাগরিতে ভাগ করে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে দেশীয় চিকিৎসকদের পাশাপাশি সিঙ্গাপুর ও চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলও যুক্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, “ভর্তি ১৫ জনের অবস্থা উন্নতির দিকে। আগামীকাল অথবা পরশু তাদের পর্যায়ক্রমে ছাড়পত্র দেয়া হবে।”
চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে ইনস্টিটিউটের চারপাশে। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব এবং বিমান বাহিনীর সদস্যরা নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি চালাচ্ছেন। বার্ন ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে ব্লাড বা স্কিন ডোনেশনের প্রয়োজন নেই। সকল দগ্ধ ও আহতদের চিকিৎসার খরচ সরকার বহন করবে বলে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকালে রাজধানীর উত্তরার সৈয়দপুর এলাকায় একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনাবশত বিধ্বস্ত হয়। এতে স্কুল চলাকালে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও পথচারী দগ্ধ হন।
সর্বশেষ খবর