
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার চলমান সীমান্ত সংঘাতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। থাই সামরিক বাহিনীর দাবি, কম্বোডিয়া এখন রাশিয়ার তৈরি বিএম-২১ (BM-21 Grad) রকেট লঞ্চার ব্যবহার করে থাইল্যান্ডের অভ্যন্তরে হামলা চালাচ্ছে।
এই হামলায় বেসামরিক এলাকা, স্কুল ও হাসপাতাল পর্যন্ত আঘাত হেনেছে, যা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত।
সংঘাতের দ্বিতীয় দিনে থাইল্যান্ডে কম্বোডিয়ার রকেট হামলায় ১৫ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৪ জনই বেসামরিক নাগরিক। আহত হয়েছেন ৪৬ জন, যার মধ্যে ১৫ জন সেনাসদস্য।
কম্বোডিয়ার এক প্রাদেশিক কর্মকর্তার মতে, থাইল্যান্ডের পাল্টা হামলায় ১ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছেন। থাইল্যান্ড সীমান্তে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বিএম-২১ "গ্র্যাড" হলো সোভিয়েত ইউনিয়ন-উৎপাদিত একটি মাল্টিপল রকেট লঞ্চার সিস্টেম, যা ৪০টি রকেট একযোগে নিক্ষেপে সক্ষম। এটি দ্রুতগামী, মোবাইল এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে পারে, বিশেষ করে জনবহুল এলাকায় ব্যবহৃত হলে।
থাই সেনাবাহিনী বলেছে, “কম্বোডিয়া নিরীহ বেসামরিকদের লক্ষ্য করে ‘বিএম-২১’ রকেট ছুড়ছে, যা এক ধরনের যুদ্ধাপরাধ। দায়ীদের আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় আনতে হবে।” তারা আরও জানিয়েছে, সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে অন্তত ১২টি সীমান্ত এলাকায়।
কম্বোডিয়ার হামলার জবাবে থাইল্যান্ড F-16 যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে আকাশপথে হামলা চালিয়েছে। সংঘাত চলেছে ২১০ কিলোমিটারজুড়ে। সীমান্তে সাঁজোয়া যান, ট্যাংক ও কামান মোতায়েন করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও মালয়েশিয়া থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে শান্তিপূর্ণ সংলাপ আয়োজনের প্রস্তাব দিলেও, থাইল্যান্ড তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা প্রত্যাখ্যান করেছে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এ নিয়ে বৈঠকে বসেছে এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
এই সংঘাতের পেছনে রয়েছে ১৯০৭ সালের একটি মানচিত্র সংক্রান্ত বিরোধ। ২০০৮ সালে একটি প্রাচীন মন্দির ঘিরে বিরোধ চরমে ওঠে। বর্তমান সংঘাত শুরু হয় মে ২০২৫-এ, এক কম্বোডীয় সেনার মৃত্যুর পর।
কম্বোডিয়ার পং তুয়েক গ্রামসহ থাইল্যান্ডের সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। ৬৭ বছর বয়সী থাই নারী অং ইং বলেন, “বিস্ফোরণের শব্দ শুনে আমরা প্রাণভয়ে পালিয়েছি। এখনো আতঙ্ক কাটছে না।”
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর