
কক্সবাজারের মহেশখালীতে এক দশক আগে মালয়েশিয়ায় মৃত এক ব্যক্তিকে চাঁদাবাজি ও লুটপাটের মামলায় ১৭ নম্বর আসামি করা হয়েছে। মাহমুদুল করিম নামের এই ব্যক্তি ২০১৪ সালে মালয়েশিয়ায় মারা যান এবং তাঁর দাফন মহেশখালীর পারিবারিক কবরস্থানে সম্পন্ন হয়। মৃত্যুর এত বছর পর হঠাৎ তাঁর নাম একটি মামলায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পরিবারের দাবি, পূর্বশত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষরা পরিকল্পিতভাবে মৃত মাহমুদুল করিমকে জড়িয়ে মামলাটি সাজিয়েছে, যাতে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে নিরীহদের হয়রানি করা যায়।
স্থানীয় সূত্র ও পরিবারের সদস্যরা জানান, মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের অমাবশ্যাখালী এলাকায় একটি চিংড়ি ঘের দখলকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা, চাঁদাবাজি ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এরপর ঘটনার শিকার পক্ষকে আসামি করে পাল্টা মামলা দায়ের হলে বেরিয়ে আসে মৃত ব্যক্তিকে আসামি বানানোর বিস্ময়কর তথ্য।
চিংড়ি চাষি এনামুল করিম জানান, তাঁর পৈতৃক মালিকানাধীন ঘের দখলের চেষ্টা দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছিল একটি প্রভাবশালী সন্ত্রাসী চক্র। এর আগে তাঁকে একাধিকবার চাঁদা দাবি ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। গত ১৩ জুলাই রাতে অস্ত্রধারী ১৯ জনের একটি দল তাঁর ঘেরে হামলা চালায়। শ্রমিকদের বেঁধে নির্যাতন, ঘের ভাঙচুর, বাঁধ কেটে পোনা নষ্ট করে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করে। এ ঘটনায় এনামুল করিম ২১ জুলাই মহেশখালী থানায় মামলা (নং ৩৫) দায়ের করেন।
কিন্তু মাত্র চার দিন পর, ২৫ জুলাই হামলাকারীদের পক্ষে থাকা নুরুল কবির নামে এক ব্যক্তি উল্টো এনামুল করিম ও তাঁর পরিবারের ২২ সদস্যকে আসামি করে পাল্টা মামলা (নং ৩০) দায়ের করেন। এই মামলার সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর দিক হলো- ১৭ নম্বর আসামি মাহমুদুল করিম, যিনি ২০১৪ সালে মারা গেছেন। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, মোটা অঙ্কের লেনদেনের মাধ্যমে পুলিশকে দিয়ে সাজানোভাবে এই মামলা রেকর্ড করানো হয়েছে। এতে প্রকৃত অপরাধীরা আড়াল পাচ্ছে, আর নিরীহরা পড়ছেন হয়রানির মুখে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাদী নুরুল কবির বলেন, মৃত ব্যক্তির নাম আসা ভুলবশত হয়েছে, টাইপিং মিস্টেক হতে পারে। তবে লেনদেন সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. এনায়েত কবীর বলেন, মামলা দায়েরের সময় এন্ডোর্স হয়েছে। তদন্তে যদি কেউ নিরীহ বা মৃত প্রমাণিত হয়, তাকে বাদ দেওয়া হবে। মহেশখালী থানার ওসি মঞ্জুরুল হক বলেন, দ্রুত মামলা গ্রহণ করতে গিয়ে কখনও কখনও এমন ভুল হতে পারে। আইন অনুযায়ী আমলযোগ্য অপরাধের অভিযোগ পাওয়া গেলে তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে হয়। তবে এজাহারে যদি কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি বা মৃত ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত হয়, তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হলে চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হবে।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন বলেন, মহেশখালীতে দখলবাজির মামলায় অতিরিক্ত আসামির নাম অন্তর্ভুক্তির প্রবণতা রয়েছে। তদন্তে কেউ নিরীহ বা মৃত প্রমাণিত হলে তাকে চার্জশিটে বাদ দেওয়া হবে। আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, এনামুল করিম ও তাঁর পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয়দের দাবি, ওসি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে দখলবাজ চক্র আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর