
তিস্তার তীব্র ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দেড় শতাধিক পরিবার। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে বিলীন হয়েছে শত শত বসতবাড়ি, আবাদি জমি, ফসলি মাঠ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনা। দুই শতাধিক একর জমি ইতোমধ্যে তিস্তাগর্ভে হারিয়ে গেছে। অথচ স্থায়ী প্রতিরোধের বদলে কিছু জিও ব্যাগ ও টিউব ফেলে দায়সারা চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। নদী ভাঙনের হুমকিতে আতঙ্কিত হাজারো মানুষ এখন ভাঙা ঘর সরিয়ে কাঁধে নিয়ে ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ও হরিপুর ইউনিয়নের লালচামার, চরিতাবাড়ী ও কানি চরিতাবাড়ী এলাকায় নদীভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কোথাও ভাঙন তীব্র, কোথাও ধীরগতিতে হলেও থেমে নেই নদীর খামখেয়ালি। ভোরের পাখি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকাগুলো এখন মারাত্মক হুমকির মুখে। অনেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন, কেউ কেউ ইতোমধ্যে আশ্রয়হীন হয়ে গেছে।
লালচামার গ্রামের কৃষক মমিনুল বলেন, “তিস্তার পানি সামান্য বাড়লেই ভাঙন শুরু হয়। এবারে আমার বসতবাড়ি, তোষাপাট আর জমি—সব চলে গেছে। সামনে কী খাব, কোথায় থাকব বুঝতে পারছি না।”
কানি চরিতাবাড়ী গ্রামের হোসেন আলী বলেন, “আমার জীবনে ১২ বার নদীভাঙনের শিকার হয়েছি। এই কষ্ট আর সহ্য করতে পারছি না।”
হরিপুর ইউপির সদস্য আব্দুল হাকিম জানান, তার ওয়ার্ডে গত দুই সপ্তাহে ৬০-৭০টি পরিবারের ঘরবাড়ি তিস্তায় বিলীন হয়েছে। কোনো ধরনের সরকারি সহায়তা এখনো মেলেনি। এদিকে কাপাসিয়া ইউপির সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, “পানি উন্নয়ন বোর্ড মাত্র ৩৯ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলেছে। কিন্তু ভাঙন ২০০ মিটার এলাকায় বিস্তৃত। এভাবে কিছু করা হচ্ছে শুধু লোক দেখানো।”
কাপাসিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মঞ্জু মিয়া জানান, “উত্তর লালচামারে শতাধিক পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। মসজিদ, স্কুল সব ভাঙনের মুখে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেই। মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে।”
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, “ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ও টিউব ফেলা হচ্ছে। তবে স্থায়ী সমাধান সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়।”
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, “ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে কাজ চলছে। আমরা নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছি।”
স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়ে নদীপাড়ের মানুষ বলছেন, প্রতি বছর একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হয়। ঘর হারিয়ে, জমি হারিয়ে তারা ফের নতুন করে জীবন শুরু করেন, আবার হারান। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও নদীভাঙন রোধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর