
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য টাকা জমা শেষ বাড়ি ফিরছিলেন স্নেহা চক্রবর্তী। পথে সড়ক দুর্ঘটনার প্রাণ হারালেন এ মেধাবী শিক্ষার্থী। বুধবার দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্নেহার মৃত্যুশোক সইতে পারছে না তার পরিবার। মা জ্যোতি চক্রবর্তী বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। জ্ঞান ফিরলে খুঁজছেন প্রিয় সন্তান স্নেহাকে। হাসপাতালে ভিড় করা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, স্বজন, সবার চোখে-মুখে কষ্ট-শোকের ছাপ।
সুনামগঞ্জ সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ২০২৪-২০২৫ সেশনে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ সেশনের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে চান্স পেয়েছিলেন স্নেহা। আজ বুধবার ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন তার। বাবা শান্তিগঞ্জ উপজেলার আস্তমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপুল চক্রবর্তী সকালে মেয়েকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। ভর্তির কাজ শেষে সুনামগঞ্জ শহরের বাসায় ফেরার জন্য স্নেহাকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে দেন। এটিই ছিলো স্নেহার শেষ যাত্রা। আর বাড়ি ফেরা হলো না তার। পথেই বাস-অটো দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তিনি।
মেয়ের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মা জ্যোতি চক্রবর্তী ও ছোট ভাই সূর্য চক্রবর্তী হাসপাতালে যান। সেখানে মরদেহ দেখে জ্ঞান হারান মা। বাবা ও ভাই সূর্যের কান্নায় জরুরি বিভাগে হৃদয়বিদারক পরিবেশ তৈরি হয়।
সুবিপ্রবি’র শিক্ষার্থীরা বলছেন, সুনামগঞ্জ সিলেট সড়কে ফিটনেসবিহীন পরিবহণ ও চালকদের অসচেতনতার কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা। দ্রুত জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি তাদের। কয়েকমাস পরপর চালকদের ডোপ টেস্ট ও গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষার করার দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের।
স্নেহার মামাতো ভাই মলয় চক্রবর্তী বলেন, ‘আমার পিসা-পিসির (ফুফা-ফুফির) স্বপ্ন ছিল মেয়ে ডাক্তার হবে। কিন্তু মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পায়নি স্নেহা। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে চান্স পায় স্নেহা। পরিবারের সঙ্গে থাকবে এ জন্য তাকে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। কিন্তু পরিবারের সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলো ঠিকই, কিন্তু সকলকে কাঁদিয়ে শেষ বিদায় নিতে হলো তাকে।’
সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সুবিপ্রবি) প্রক্টর ড. শেখ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘স্নেহা বুধবার টাকা জমা দিয়ে ভর্তি হয়েছে। সে আজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়েছিল। তার মৃত্যু অনাকাঙ্খিত। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি।
হাইওয়ে পুলিশের মামলা পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন পুলিশ সুপার তোফায়েল আহাম্মেদ। এই দুর্ঘটনায় শান্তিগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা জাহান খুশি, এবং শফিকুল ইসলাম (৫০) নামের আরও একজন সিএনজি যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের আরেক শিক্ষার্থী ও অটোচালক।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর