
বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতের কারণে একের পর এক বসতবাড়ি ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। সুঘাট ও মির্জাপুর ইউনিয়নের কাশিয়াবালা, বিনোদপুর ও মাওনা এলাকায় পাঁচটি স্থানে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর ফলে প্রায় ৫০টি বাড়ি, একটি এতিমখানা, একটি হাফিজিয়া মাদরাসা এবং একমাত্র কবরস্থান ভাঙনের মুখে পড়েছে।
এই নদীভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উত্তরপাড়া এলাকার মাজেদা খাতুন (৫৫)। করতোয়া নদীর ভাঙনে তাঁর শেষ আশ্রয়স্থলটুকুও পানির তলায় চলে গেছে। বর্তমানে শুধু বাড়ির একপাশের মাটির চুলা নদীর কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে। সেই চুলার পাশে বসে অসহায়ত্বের ছাপ নিয়ে আগ্রাসী হয়ে ওঠা করতোয়া নদীর দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি। মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, অন্যের জমিতে ঘর তোলার মতো অর্থও নেই। বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচেই রাত কাটাচ্ছেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিনোদপুর উত্তরপাড়া গ্রামের মাজেদা খাতুনের ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়াও কাশিয়াবালা এলাকায় করতোয়া নদীর তীরবর্তী জমি প্রতিদিন ভাঙনের শিকার হচ্ছে। বিনোদপুর গ্রামের চান মিয়া, বাবলু, বুলু, এবাদুল্লাহ, কমরউদ্দিন, আলাউদ্দিন, সায়েদ আলী, ঈমান আলী ও মওলাবক্সসহ অন্তত ৫০টি পরিবারের বসতভিটা এখন নদীভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। অনেকের ঘরের মাটি ইতিমধ্যেই নদীতে ধসে পড়েছে, বাকিটা ভাঙন শুধু সময়ের অপেক্ষা। অনেক কৃষকের আবাদি জমিও নদীতে তলিয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি এসে প্রবল স্রোত সৃষ্টি হয় এবং এখানে নদীর বাঁক থাকায় পানি সরাসরি তীরে আঘাত হানে। ফলে দ্রুত পার ভেঙে যাচ্ছে। এ ছাড়া বাঙালি নদী খননের ফলে করতোয়ার স্রোত আরও তীব্র হয়েছে, যার প্রভাবে ভাঙন বেড়েছে। প্রতিবছরই করতোয়ার ভাঙনে অসংখ্য পরিবার নিঃস্ব হলেও নদী রক্ষায় কোনো স্থায়ী উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। তাঁরা দ্রুত নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও জরুরি ত্রাণ সহায়তার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
চোখে হতাশার চিহ্ন নিয়ে মাজেদা খাতুন বলেন, "আমার শেষ সম্বল বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন। আগামী দিনে সবার বা সরকারি সহায়তায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে পাব, তবে এই মুহূর্তে আমার জন্য চলমান জীবন এক কঠিন সংগ্রাম।"
বিনোদপুর ও কাশিয়াবালা গ্রামের বাবলু, আওয়াল, বুলু, এবাদুল্লাহ, কমরুদ্দিসহ অনেকে বলেন, "করতোয়া নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের প্রশ্ন, আর কত ঘরবাড়ি নদীতে যাবে, কত পরিবার এভাবে পথে বসলে, আসবে স্থায়ী সমাধান?" তাঁরা আরও বলেন, "আমরা কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। ইতিমধ্যেই প্রায় এক বিঘা জমি নদীতে চলে গেছে। যদি এভাবে ভাঙন চলতে থাকে, তাহলে আর দুই-তিন বিঘা জমির সাথে এতিমখানা, মাদরাসা ও কবরস্থানও নদীতে হারিয়ে যাবে।"
এ ব্যাপারে মির্জাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ জাহিদুল ইসলাম বলেন, "কাশিয়াবালা কবরস্থান এলাকায় প্রতিবছরই নদীভাঙন হয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানিয়েছি, তারা তীররক্ষার ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।"
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিক খান বলেন, "আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছি। তারা জানিয়েছে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাশিয়াবালা পয়েন্টে কাজ শুরু হবে। এ ছাড়াও অন্য জায়গার অনুমোদন পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে দ্রুত করতোয়া নদীর তীর রক্ষায় সকল পয়েন্টের কাজ শুরু হবে।"
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর