
ঠাকুরগাঁও জেলার ঐতিহ্যবাহী রাণীশংকৈল প্রেসক্লাবকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন কৃষক দলের এক নেতা।
সম্প্রতি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় ওই নেতার বিষয়ে ক্যাসিনো এজেন্ট ও কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের বিষয়ে আলোচনা হয়। সেই বিষয়ে জানতে কয়েকজন স্হানীয় সাংবাদিক সরেজমিনে অনুসন্ধানী তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তিনি রাগান্বিত হয়ে রাণীশংকৈল প্রেসক্লাবকে উড়িয়ে দেওয়া সহ প্রেসক্লাবের সভাপতি আশরাফুল আলমকে প্রাণনাশের হুমকি দেন ।
রাণীশংকৈল প্রেসক্লাব নিয়ে বিএনপি নেতার বিতর্কিত বক্তব্য ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে জেলা উপজেলার সাংবাদিক মহলে।
রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষক দলের সহ-সভাপতি মাসুদ রানা প্রেসক্লাবকে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন—এমন এমনএকটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
গত ৬ জুলাই রাণীশংকৈল বন্দরের ওই নেতার ওষুধ দোকানে বক্তব্য নিতে গেলে, তিনি কথা বলার মূলধারার সাংবাদিকদের উদ্দেশে কটূক্তি করেন এবং প্রেসক্লাবকে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন। এবং সাংবাদিকের প্রাণনাশেরও হুমকি দেন। এই বক্তব্য পরে ফেসবুক আইডিতে সাংবাদিকদের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
বক্তব্যটি প্রকাশ্যে আসার পরপরই জেলা উপজেলার সাংবাদিক সমাজে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ৮ জুলাই সন্ধ্যায় রাণীশংকৈল প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা জরুরি সভায় বসে।
সভায় বক্তারা কৃষকদলের নেতা মাসুদ রানার বক্তব্যকে উসকানিমূলক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য হিসেবে উল্লেখ করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একইসঙ্গে সাংবাদিকদের ধৈর্য ধারণ ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানানো হয়।
এ ঘটনায় প্রেসক্লাবের সভাপতি আশরাফুল আলমসহ কয়েকজন সাংবাদিক থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডিতে তারা উল্লেখ করেন, মাসুদ রানার বক্তব্য সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে এবং প্রেসক্লাবে হামলার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
জিডিতে আরও বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার কারণে তিনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে নানা ব্যক্তিগত আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন।
তার অনুসারীদের মাধ্যমে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে দেখে নেওয়ার হুমকি, ছড়ানো হচ্ছে বিভ্রান্তিকর তথ্য—যা সাংবাদিকদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করছে।
এবিষয়ে উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আল্লামা ওয়াদুদ বিন নুর আলিফ বলেন, মাসুদ রানা কৃষকদল কমিটিতে রয়েছে কি না আমার জানা নেই। যদি কমিটিতে থেকে থাকে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মীর্জা ফয়সল আমিন বলেন, বিএনপি কখনোই স্বাধীন সাংবাদিকতার বিরোধিতা করে না। আমরা দলীয়ভাবে এ বক্তব্যকে সমর্থন করি না। কেউ এধরনের হুমকি দিয়ে থাকলে এটি দুঃখজনক ঘটনা। বিষয়টি আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
জেলার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা মনে করছেন, মাসুদ রানা বক্তব্য কেবল গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ নয়, এটি সংবিধান ও গণতন্ত্রবিরোধী মানসিকতার প্রতিফলন।
রাণীশংকৈল থানা (ওসি) আরশেদুল হক বলেন, বিষয়টি আমি জানি। এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর