
‘ধান, নদী, খাল—ইলিশের নিবাস বরিশাল’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বর্ণিল আয়োজনে মলিদা উৎসব ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (১৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের বরিশাল বিভাগীয় ছাত্র কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে ক্যাম্পাসের ডায়না চত্বরে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। দিনব্যাপী এ আয়োজনে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। উৎসবের প্রধান আকর্ষণ ছিল ঐতিহ্যবাহী মলিদা পরিবেশন ও বরিশালের সংস্কৃতি-ঐতিহ্য প্রদর্শনী।
উৎসব প্রাঙ্গণে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা নিজস্ব স্টল সাজিয়ে তুলেছেন রঙিন সাজসজ্জায়। বরিশালের ইতিহাস, নদ-নদী, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যবাহী খাবারের ছবি টাঙানো হয়। পাশাপাশি বরিশালের পরিচিত লোকসংস্কৃতি ও গানের নানা দিক তুলে ধরেন আয়োজকরা। উৎসবে শিক্ষার্থীরা ছাড়াও শিক্ষক-কর্মচারী-কর্মকর্তা ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে ডায়না চত্বর।
মলিদার প্রস্তুত প্রণালি সম্পর্কে আয়োজকরা জানান, "আমরা ছোটবেলা থেকেই মা, খালা, চাচিদের মলিদা বানাতে দেখে আসছি। সেখান থেকেই আমরা শিখেছি। এটা প্রস্তুত করার জন্য প্রথমে দরকার নারিকেল, আদা, চিঁড়া, মুড়ি ও পোলাও চালের গুঁড়া। এরপরে আমরা বরফ, পানি, চিনি ও লবণ দিয়ে মলিদা প্রস্তুত সম্পন্ন করি।"
সংগঠনটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আর নোমান বলেন, "আমরা বিশ্বাস করি এটি আমাদের একটি দায়িত্ব এবং গর্বের বিষয় যে, বরিশালের ঐতিহ্যবাহী খাবার মলিদাকে সকলের মাঝে তুলে ধরা। এই উদ্দেশ্যে আজকের আয়োজনটি করা হয়েছে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৪ জেলার শিক্ষার্থীদের জন্য মলিদা পরিবেশন করা হবে। এটি একটি ব্যতিক্রম খাবার যা বরিশালের ঐতিহ্য বহন করে। এতে মূল উপকরণ হিসেবে থাকে আদা বাটা, নারিকেল বাটা, চালের গুঁড়া এবং চিঁড়া। সব মিলিয়ে এটি একটি পানযোগ্য ধরনের খাবার, যা স্বাদে ও পুষ্টিগুণে অনন্য। মাত্র ২০ টাকা শুভেচ্ছা মূল্য হিসেবে রাখছি, যাতে এই খাবারটির স্বাদ সবাই নিতে পারে এবং বরিশালের ঐতিহ্যকে আরও কাছ থেকে জানতে পারে।"
দর্শনার্থী এক শিক্ষার্থী বলেন, "আমার বরিশালের বান্ধবী থেকে শুনছিলাম যে মলিদা নামের একটা খাবার আছে। আমি জানতাম না এটা দেখতে কেমন কিন্তু শুনেছিলাম ওটা আদা দিয়ে তৈরি করা হয়। আজকে হঠাৎ ক্যাম্পাসে এসে দেখছি যে মলিদা উৎসব হচ্ছে। তো মলিদা সম্পর্কে আমি যেহেতু জেনেছি তাই একটু টেস্ট করি। একটু নোনতা আর মিষ্টির সংমিশ্রণ মনে হয়েছে। টেস্ট ওভারঅল ভালো। আর যেহেতু এটা একটা জেলার ঐতিহ্য তাই আমি মনে করি, যেকোনো জেলারই তার ঐতিহ্য তার ভালোবাসার জায়গা। তারা এটা তুলে ধরেছে দেখে অনেক ভালো লাগছে।"
পরিদর্শন করতে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন , "আমরা ছোটবেলা থেকেই শিখেছি ধান, নদী, খাল, এই তিনে বরিশাল। তবে আজ জানতে পারলাম, বরিশালকে ইলিশের নিবাসও বলা হয়। বরিশাল একটি সমৃদ্ধ বিভাগ যা ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আতিথেয়তায় পরিপূর্ণ। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বরিশাল বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার মলিদা পরিচিত করার জন্য একটি সুন্দর উদ্যোগ নিয়েছে। আমি নিজেও এর নাম আগে শুনিনি। এই আয়োজন শুধু খাবারের নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মানবিকতার বার্তা বহন করে।"
তিনি আরও বলেন, "আমি আহ্বান জানাই এই ধরনের আনন্দময় ও ইতিবাচক উদ্যোগ যেন অন্যান্য বিভাগও গ্রহণ করে। সংঘাত নয়, আমরা যেন সংস্কৃতির মাধ্যমে একে অপরের কাছে আসি। সময়ের সঠিক ব্যবহার করি, পড়াশোনায় মনোযোগ দিই। হলের বাইরে অহেতুক সময় নষ্ট না করে নিজেদের উন্নয়নে মনোযোগী হই। সবাইকে অনুরোধ করবো শুধু নিজের জন্য নয়, অসহায় মানুষদের জন্যও ভাবো, তাদের পাশে দাঁড়াও। এই হোক আমাদের সত্যিকারের ব্রত।"
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর