• ঢাকা
  • ঢাকা, বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১৭ সেকেন্ড পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২০ আগস্ট, ২০২৫, ১২:১৭ দুপুর

রাখাল ফারুকের দুঃসাহসী উত্থান

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের রক্ষ রইক্যং উত্তর পাড়ার একটি জরাজীর্ণ বাড়ি। সেখানেই বেড়ে ওঠেন মো. ফারুক (২৭)। দিনমজুর কামাল উদ্দিন প্রকাশ ফিক্কিনির ছেলে ফারুক একসময় পেটের দায়ে রাখালের কাজ করতেন। কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সেই রাখাল যুবক আজ কোটি টাকার মালিক।

স্থানীয়দের মতে, তার এই দ্রুত উত্থানের পেছনে রয়েছে মাদক কারবার ও রোহিঙ্গা সিন্ডিকেটের ভয়াবহ যোগসূত্র রয়েছে। মাদক মামলায় কয়েকবার কারাভোগের পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাখাল ফারুকের ভাগ্য ঘুরে যায় বিয়ের পর। উনছিপ্রাং এলাকার শীর্ষ এক মাছ ব্যবসায়ীর মেয়েকে বিয়ে করেন তিনি। সেখানেই পরিচয় ঘটে মিয়ানমারের মংডুর রোহিঙ্গা যুবক জাহাঙ্গীরের সঙ্গে। জাহাঙ্গীর ভোচিদং সীমান্ত ঘেঁষা এলাকা দিয়ে ইয়াবা সরবরাহ করতেন। তার হাত ধরে ফারুক ধীরে ধীরে মাদকের বড় খেলোয়াড়ে পরিণত হন।

স্থানীয়রা বলছেন, ‘অল্প কয়েক বছরে ফারুকের ব্যাংক একাউন্টে কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। হঠাৎ করেই তিনি তিনটি সিএনজি, দুইটি মোটরসাইকেল- যার একটি দামি আর১৫ (R15-3) এবং আরেকটি এফজেট (Version 4)- কিনে ফেলেন। সম্প্রতি তিনি ১৫ খানি জমিও ক্রয় করেছেন এবং দৃষ্টি নন্দন বাড়িও করেছে।’

একজন প্রতিবেশী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যে ছেলেটা একসময় অন্যের গরু চরাতো, আজ সে কোটি টাকার মালিক। সবাই জানে- এই টাকার উৎস ইয়াবা।’

ফারুক শুধু ইয়াবা ব্যবসায়ী নন, স্থানীয় ও সীমান্ত সূত্রের দাবি- তিনি উনছিপ্রাং নাফনদীর আরসার ঘাটিতে নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ করেন। এর বিনিময়ে মিয়ানমার থেকে নিয়ে আসেন বিপুল পরিমাণ ইয়াবা। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে।

সম্প্রতি সেনাবাহিনীর হাতে আরকান আর্মির সামরিক বাহিনীর পোশাকসহ দুই রোহিঙ্গা আটক হয়। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, এসব পোশাক চট্টগ্রাম থেকে সংগ্রহ করে টেকনাফে আনার মূল হোতা ছিলেন ফারুক।

স্থানীয় একটি সূত্রের দাবি, বয়সে ফারুক তরুণ হলেও তার দুঃসাহস এখন আকাশচুম্বী। সীমান্তপারের সশস্ত্র সংগঠন আরকান আর্মি ও (আরসা)-র সঙ্গে তার রয়েছে সরাসরি যোগাযোগ। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিয়মিত তাদের জন্য পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী পাঠায় ফারুক। বিনিময়ে সীমান্তপথে আসে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা।

সূত্রটি আরও দাবি করেন, ফারুক এখন আর সাধারণ মাদক কারবারি নন; বরং রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর এক ধরনের সরবরাহকারী ও দালাল হিসেবে কাজ করছে। রাতে বনজঙ্গলে তার অবাধ বিচরণ, যেন সে পুরো সীমান্ত অঞ্চলই নিয়ন্ত্রণ করছে।

স্থানীয়রা আতঙ্কের সঙ্গে বলেন, সে এখন এমন পর্যায়ে গেছে যে, পুলিশ-র‍্যাব তাকে ধরতে আসলেও ফারুক নাকি আগে থেকেই খবর পেয়ে যায়। রাতের আঁধারে জঙ্গলেই তার সবচেয়ে বেশি সময় কাটে।

গত কয়েকদিন আগেও ফারুক সীমান্ত এলাকায় গভীর রাতে অস্ত্রধারী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন। তাদের প্রশ্ন- এক সময়ের রাখাল ফারুক কীভাবে এত কম সময়ে এত বড় নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিল, আর প্রশাসন কেনই বা তার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না?

স্থানীয় এক মাদকবিরোধী কর্মী জানান, ফারুক নিয়মিত ইয়াবা হজমের নাটক সাজান। যদি কোনো চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে, তবে সেই ইয়াবার টাকা মকুফ করা হয়। অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে আটক করেছে- এমন নাটক সাজিয়ে চালান গায়েব করে দেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাতে বাকিতে আনা প্রায় ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে উধাও হন ফারুক ও তার ড্রাইভার। ওইদিন তিনি নিজের মালিকানাধীন আরিয়ান হাসান রিজবি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি সিএনজি (নম্বর: কক্সবাজার-থ ১১-৮১০৮) ব্যবহার করেন। কুতুপালং বাজারের শেষাংশে ইয়াবার চালান তোলার পর ড্রাইভার ও ফারুক দুজনই পালিয়ে যান।

পরে ফারুক কৌশলে দাবি করেন, গাড়িটি হারিয়ে গেছে। এরপর পুলিশি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিএনজিটি উদ্ধার করা হয়। এতে করে ইয়াবার ডিলারদের ধারণা হয়, গাড়িতে থাকা ২০ হাজার ইয়াবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জব্দ করেছে এবং পরবর্তীতে চালানটি গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার পরপরই ওই ২০ হাজার ইয়াবা বিক্রি করে নতুন একটি সিএনজি ও একটি মোটরসাইকেল ক্রয় করেন।

গত কয়েকদিন আগে র‍্যাব বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ দুই মাদক কারবারিকে আটক করে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ফারুককে মূল মালিক হিসেবে উল্লেখ করে তাকেও আসামি করা হয়। তবে স্থানীয়দের দাবি, র‍্যাব যে পরিমাণ ইয়াবা জব্দ দেখিয়েছে- তা ছিল প্রায় ৩০ হাজার পিস, অথচ প্রকৃত চালানটি এর চেয়ে অনেক বড় ছিল।

স্থানীয়দের অভিযোগ, তার শ্বশুর বকতিয়ার আহমদও এলাকায় চিহ্নিত। শ্যালক নাছির উদ্দিন ও জাবের আহমদ তার এই নেটওয়ার্কে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে।

স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে ফারুককে চিনি। একসময় রাখাল ছিলো, কষ্টে দিন কাটাতো। এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। সবাই জানে- এই টাকার উৎস ইয়াবা।

গ্রামের এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন, ‘বয়সে তরুণ, কিন্তু তার দুঃসাহস সীমাহীন। রাতের অন্ধকারে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গেও তার ওঠাবসা রয়েছে- এমন কথা এলাকায় প্রায়ই শোনা যায়।’

স্থানীয় এক মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, ‘কয়েকদিন আগের ঘটনায় র‍্যাব ৩০ হাজার ইয়াবা দেখালেও লোকজন বলছে, আসলে অনেক বেশি ছিল। চালান গায়েব করার জন্যই কম দেখানো হয়েছে। এসবের নেপথ্যে ফারুকের প্রভাব আছে বলে আমরা মনে করি।’

একজন স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘এভাবে যদি মাদক কারবারি আর সন্ত্রাসীদের দাপট বাড়তে থাকে, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রশাসনের ভেতর থেকেও কেউ কেউ তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, নইলে এত বড় নেটওয়ার্ক চালানো সম্ভব না।’

হোয়াইক্যং এলাকায় র‍্যাব-১৫ ক্যাম্প স্থাপনের পরও ইয়াবা সিন্ডিকেটের প্রভাব কমেনি। অভিযোগ আছে, র‍্যাব ক্যাম্পের এক সাবেক কমান্ডার দায়ীত্বে থাকার সময় একাধিক ইয়াবা আটকের নাটক সাজানো হয়, যার পেছনে ফারুকের হাত ছিল।

উত্তর পাড়ার এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, ফারুকের হাতে টাকা-পয়সা আসার পর থেকেই এলাকায় সন্ত্রাস, দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। অথচ প্রশাসনের একাংশ তাকে শেল্টার দিচ্ছে। তাই লোকজন মুখ খুলতে ভয় পায়।

তার মতে, এক সময়ের গরু চরানো ফারুক আজ টেকনাফ-উনছিপ্রাং সীমান্তের আলোচিত ইয়াবা গডফাদার। আরসার সঙ্গে তার সরাসরি যোগাযোগ, কোটি টাকার সম্পদ, মাদক মামলার ইতিহাস এবং প্রশাসনের চোখে ধুলা দেওয়ার কৌশল- সব মিলিয়ে তার অপরাধ সাম্রাজ্য দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে।

সচেতন মহল বলছেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে ফারুকের মতো অপরাধীরা সীমান্তকে আরও ভয়াবহ অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেবে।’

এ বিষয়ে ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। পরে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলে তিনি দাম্ভিকতার সঙ্গে উত্তর দেন, ‘আমার বাবা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যত হাসপাতাল হয়েছে সবই নির্মাণ করেছেন। এভাবেই আমরা টাকাওয়ালা হয়েছি। আপনার পুরো পরিবার দরিদ্র, একসময় তো আপনাদের কিছুই ছিল না।’

প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাবা যদি এসব জানতে পারেন, তিনি মাইন্ড করবেন। নিউজে ছাপানোর জন্য আপনার কাছে যদি ছবি না থাকে, আমি ভাল ছবি পাঠাতে পারি।’

ফারুকের সম্পদ, আরকান আর্মির সঙ্গে তার সরাসরি যোগাযোগ এবং ভয়ংকর মাদক নেটওয়ার্ক নিয়ে অনুসন্ধান চলছেই। এই রহস্যময় এবং শক্তিশালী সিন্ডিকেটের প্রকাশ করা হবে আগামী ৩ পর্বে। দৈনিক মেহেদীতে চোখ রাখুন- সত্যের গল্প যা আপনাকে চমকে দেবে।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]