
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলন ঘিরে বুধবার দিনভর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সকাল থেকে উখিয়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন সড়কে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিলে পুলিশ তাদের সরাতে গেলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে অন্তত ২৮ জন শিক্ষককে আটক করে এবং প্রায় মুহাম্মদ খালিদ বিন সাঈদসহ ১৫ জন আহত হন। গুরুতর আহত তিনজনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন, তারা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন, কিন্তু পুলিশ অকারণে বলপ্রয়োগ করেছে। চাকরিচ্যুত শিক্ষক আবদুল করিম বলেন, "আমরা তিন মাস ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। কিন্তু বারবার আশ্বাসের পরও সমাধান হয়নি। আজ পুলিশ বিনা কারণে আমাদের ওপর চড়াও হয়েছে।"
পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।
এদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, এক নারী শিক্ষক চিৎকার করে বলছেন—"এই মরি গিওই।" ভিডিওটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। পরে জানা যায়, ওই নারী গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
ঘটনার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন পুলিশের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে। জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, "দমন-পীড়ন নয়, আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক সমাধান করতে হবে।" তরুণ রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার সাফাত ফারদ্দিন চৌধুরী বলেন, "শিক্ষক প্রতিনিধি ও প্রশাসনের সমন্বয়ে আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব।" এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতা এসএম সুজা উদ্দিন এক ফেসবুক বার্তায় উল্লেখ করেন, "উখিয়া কোনো আলাদা দেশ নয় যে এখানে আন্দোলন করা যাবে না। আমরা জনগণের সাথে আছি, ছিলাম। সকল শিক্ষকদেরকে সসম্মানে মুক্ত করে কক্সবাজার এনসিপি ও জুলাই যোদ্ধারা আবারও প্রমাণ করলো জুলাই মরে নাই।"
পরে বিকালে থানায় শিক্ষক প্রতিনিধি, পুলিশ প্রশাসন, রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের নেতাদের উপস্থিতিতে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিক্ষক আন্দোলনের প্রতিনিধি ছাড়াও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডমিন) শাকিব, উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আরিফ হোসাইন, এনসিপি'র কেন্দ্রীয় নেতা এসএম সুজা উদ্দিন, উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরী, উখিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা আবুল ফজল, উখিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, উখিয়া উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব সাদমান জামী চৌধুরী, উখিয়া উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা নুরুল হকসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
উক্ত বৈঠকের সিদ্ধান্তক্রমে আটক ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে গ্রেপ্তার করা জুলাই আন্দোলন সম্মুখযোদ্ধা জিনিয়া শারমিন রিয়া, শিক্ষক আন্দোলনের সমন্বয়ক শামীমসহ ২৮ শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে মুক্তি দেওয়া হয়। আন্দোলনকারী শিক্ষকরা আপাতত ২৭ আগস্ট পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন।
প্রসঙ্গত, ইউনিসেফের অর্থায়নে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিচালিত শিক্ষা প্রকল্পের একাংশ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সম্প্রতি ১২ শতাধিক স্থানীয় শিক্ষক চাকরি হারান। এরপর থেকেই তারা চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
সর্বশেষ খবর