
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেছেন, আমার ‘ফজু পাগলা’ নাম প্রথমে বলেছে মুফতি আমির হামজা নামে একজন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীও বলছে আমি নাকি ‘ফজু পাগলা’।
সোমবার (২৫ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে অবস্থিত আইন, বিচার, সংবিধান ও মানবাধিকার বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন। এ সময় তার স্ত্রী ও ছেলেও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
দেশের স্বাধীনতার জন্য ৫৪ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধ করার কথা উল্লেখ করে দেশবাসীর উদ্দেশে ফজলুর রহমান প্রশ্ন করেছেন, এই দেশে তার বেঁচে থাকার অধিকার আছে কি না। বিশ্বজুড়ে ঘৃণিত ‘মব জাস্টিস’ তার ওপর চলতে পারে কি না। এগুলোর উত্তর যদি ‘না’ হয়, তাহলে এসবের প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য’ দেওয়ার অভিযোগে গত রোববার তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিএনপি। এরপর মধ্যরাত থেকে তাকে গ্রেফতারের দাবিতে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ফজলুর রহমানের বাসার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন একদল ব্যক্তি।
এ পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফজলুর রহমান সোমবার আদালত প্রাঙ্গণে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
নিজের ও স্ত্রী–সন্তানের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘হে বাংলাদেশের মানুষ, আমি তো আজ থেকে ৫৪ বছর আগে আপনাদের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। আজকে যে সন্তানেরা আমার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়, তোমাদের জন্য একটি স্বাধীন দেশ সৃষ্টি করার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। তোমাদের কাছ থেকে কি অপমৃত্যুটা আমার কাম্য?’
ফজলুর রহমান বলেন, ‘যদি আমার কোনো কথায় তোমরা মনে করো, আমি দেশের বিরুদ্ধে কথা বলছি বা তোমাদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলছি, আমার বিরুদ্ধে মামলা করো, আমাকে গ্রেফতার করো, আমাকে শাস্তি দাও। কিন্তু আমাকে হত্যা করার জন্য আমার বাসা পর্যন্ত মব সৃষ্টি করো গিয়া, যেটা গত এক বছর যাবৎ বাংলাদেশে, এই পৃথিবীতে এবং বাংলাদেশে সবচেয়ে কুখ্যাত নাম মব, সেই মব জাস্টিস আমার ওপর চলতে পারে কি না এবং চলবে কি না, সেটা আমি বাংলাদেশের মানুষের কাছে জিজ্ঞাসা করতে চাই।’
ফজলুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ, আপনারা জেনে রাখুন, আমার জীবন বড় শঙ্কায় আছে। আমি মুক্তিযুদ্ধ ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি।…আমি একজন মানুষ। আমার অধিকার আছে বেঁচে থাকার।’
এ পরিস্থিতিতে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘জিডি করব না, মাইরা ফেললেও… জিডি–টিডি কিছুই করব না।’
তিনি বলেন, ‘আজকে (সোমবার) হঠাৎ করে সকালে যেটি দুর্ভাগ্যজনক, আমার বাসার সামনে কিছু মিছিলের শব্দ পাইলাম। সেই শব্দগুলো বলাটাও আমার কাছে মনে হইল, কিছু ছোট ছোট ছেলেমেয়ে আমার সন্তানের সমান। এরা কারা, আমি চিনিও না। এরা স্লোগান আমার নামে দিল, ফজু পাগলাকে গ্রেফতার করো...ইত্যাদি ইত্যাদি। ফজু পাগলা মানে আমি বাংলাদেশে এখন ফজু পাগলা হয়ে গেছি।
এই নামটা আমাকে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াতে ইসলামী—আমি নাকি ফজু পাগলা। প্রথম এই কথাটা বলেছে, মুফতি আমির হামজা নামে একজন লোক।…এই ছেলেপেলেরাও আমার নামে ফজু পাগলা স্লোগান দিয়েছে, আমি বাংলাদেশের একজন পাগলা। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হলো, তারা আমাকে হত্যা করতে চায়। আমাকে মারতে চায়, তারা আমার বাসার সামনে যেভাবে গিয়ে মব সৃষ্টি করেছে... আমি দেখছি, গত এক বছর ধরে ৫ আগস্টের পর থেকে আমাদের কিছু সন্তান মব সৃষ্টি করে তাদের দাবি-দাওয়া বলেন, আর যা–ই বলেন, আদায় করতে চায়।…কিন্তু আমার মতো একজন সিনিয়র মানুষ যে দেশটার জন্য যুদ্ধ করেছি, আমি যুদ্ধ না করলে বা মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ না করলে এই সন্তানেরা তো বাংলাদেশের সন্তান হইত না, এরা হইত পাকিস্তানের সন্তান।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর
রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর