
গাজীপুরের কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানের পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অভিযানে ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ মেলার পর প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে জবাবদিহিতার আওতায় না এনে ৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কৈফিয়ত তলব করায় জেলা সিভিল সার্জন অফিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
গত ২৫ আগস্ট দুদকের একটি দল কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানকালে দলটি রোগীদের খাবারে পরিমাণ কম দেওয়া, ওষুধের হিসাবে গরমিল এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পায়। দুদকের তদন্তকারী দল এসব অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার জন্য প্রতিষ্ঠানটির প্রধান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেজওয়ানা রশিদকে দায়ী করে। স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ডা. রেজওয়ানা রশিদ সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে পারেননি এবং একপর্যায়ে নিজের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে নেন।
কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, ঘটনার পর জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে ডা. রেজওয়ানা রশিদের কাছে কোনো কৈফিয়ত তলব করা হয়নি। পরিবর্তে, হাসপাতালের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা আটজনের কাছে কৈফিয়ত তলব করে চিঠি দেওয়া হয়। কৈফিয়ত তলব প্রাপ্তরা হলেন— আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ রেজাউল হক, প্রধান সহকারী কাম-হিসাব রক্ষক এটিএম কামরুজ্জামান, উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আবু সাহিদ, নার্সিং সুপারভাইজার কনক রোজারিও, সিনিয়র স্টাফ নার্স জ্যাকসি রোজারিও এবং তিনজন ফার্মাসিস্ট মুহাম্মদ গোলাম সারোয়ার, মোঃ আসাদুজ্জামান খান ও মনোতোষ সরকার।
একজন দপ্তরের প্রধানের দায় এড়িয়ে অধস্তনদের উপর দায় চাপানোর এই ঘটনায় সাধারণ মানুষ মনে করছেন, ডা. রেজওয়ানা রশিদ নিজের পদ বাঁচাতে অসদুপায় অবলম্বন করছেন।
ডা. রেজওয়ানা রশিদের বিরুদ্ধে আরও একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তিনি নিজ দপ্তরে সরকারি বিধির তোয়াক্কা না করে ব্যক্তিগত খরচে একজন সহকারী নিয়োগ দিয়েছেন এবং তার জন্য অফিস কক্ষে টেবিলের ব্যবস্থা করেছেন। এই নিয়োগের এখতিয়ার তার আছে কিনা, গণমাধ্যম কর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বীকার করেন যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে এই অধিকার দেয়নি।
এছাড়া, বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে কোনো পদে না থাকা সত্ত্বেও তিনি তার স্বামীকে নিজের পাশের চেয়ারে বসিয়ে রাখেন বলেও অভিযোগ রয়েছে, যা তিনি স্বীকার করেছেন।
এতগুলো অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন ডা. রেজওয়ানা রশিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মামুনুর রহমান বলেন, "আমি তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করেছি। যেহেতু সে ওই হাসপাতালে মাত্র কয়েক মাস ধরে যোগদান করেছে তাই তাকে লিখিতভাবে কোন ধরনের নোটিশ প্রদান করিনি। তবে তার ব্যাপারে বেশ কিছু অভিযোগ জানতে পেরেছি, সংশ্লিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শোকজের একটি নোটিশ কপি আমার কাছে রেডি করা আছে। আজকের মধ্যেই তার কাছে নোটিশের কপি পাঠানো হবে।"
তার এই আশ্বাসের পর এখন দেখার বিষয়, অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর