
ইলিশ বাঙালি জাতির গর্ব। বাংলাদেশের জাতীয় মাছ হওয়া সত্ত্বেও এখন স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে ইলিশ। বর্তমানে বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম আড়াই হাজার টাকা। এই মাছ পেতে হলে একজন কৃষককে দিতে হয় দুই মণ ধান। ইলিশের মৌসুম হওয়া সত্ত্বেও বাজারে ইলিশের দাম এতটাই বেড়েছে যে, উৎসবের খাবার থেকে বিলাসী খাদ্যে পরিণত হচ্ছে এটি। ইলিশ শুধু মাছ নয়, বাঙালির আবেগ, সংস্কৃতি আর ইতিহাসের অংশ হলেও মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর খাবারের তালিকা থেকে ইলিশ হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্ষায় ঘরে ঘরে ইলিশ রান্নার গন্ধ এখন আর ছড়িয়ে পড়ে না। ইলিশের স্বাদ নেওয়া এখন স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য শুধুই স্বপ্ন। দুই মণ ধানের বিনিময়ে এক কেজি ইলিশের এই হিসাবটা শুধু অর্থের নয়, এটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যেরও প্রতিচ্ছবি।
দেশের সর্বদক্ষিণের উপকূলীয় অঞ্চল বরগুনার পাথরঘাটা। এখানে দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। প্রতিদিন কয়েকশ সামুদ্রিক ট্রলার মাছ শিকার শেষে বিক্রির জন্য এখানে নিয়ে আসেন। বন্দরে প্রতিদিন কয়েকশ টন ইলিশ কেনাবেচা হলেও এই অঞ্চলের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের ভাগ্যে জোটে না স্বাদের ইলিশ। স্থানীয় বাজারে দুই মণ ধানের বর্তমান বাজারমূল্য প্রতি কেজি ৩০ টাকা ধরে চব্বিশশ টাকা। মানে এক কেজি ইলিশের জন্য খরচ হচ্ছে পঁচিশশ টাকা বা তারও বেশি।
রফিকুল ইসলাম নামে এক কৃষক বলেন, “এক কেজি ইলিশের জন্য দুই মণ ধান বিক্রি করতে হয়। এত কষ্টে মাঠে কাজ করি, ফসল ফলাই কিন্তু নিজে ইলিশ মুখে তুলতে পারি না। ওটা এখন ধনীদের খাবার, আমরা শুধু টিভিতেই দেখি। বাজারে গিয়ে দাম শুনলেই হাঁসফাঁস লাগে।”
বরগুনার মজিদ নামে এক রিকশাচালক বলেন, “আমাদের এলাকায় ইলিশের উৎপাদন হলেও ইলিশ ভোজন এখন স্বপ্নের মতো। এ বছর ইলিশ এখনও কিনতে পারিনি। এক কেজি ইলিশ কিনতে আমার এক মাস আয় করতে হবে, ইলিশ জাতীয় মাছ হলেও এর স্বাদ আমরা পাই না। সরকার যদি নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে ইলিশ একদিন শুধু জাদুঘরের মাছ হবে।”
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, জেলের জালে ইলিশ ধরা পড়লেও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, পরিবহন খরচ এবং বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে দামের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে। পাইকারি পর্যায়েই কয়েকশ টাকা বাড়তি যোগ হচ্ছে, যা সরাসরি ভোক্তার কাঁধে পড়ছে। বাজারে কড়া নজরদারি থাকলেও সিন্ডিকেটের কারণে কার্যকরভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর