
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় নকল সোনার পুতুল ও মুদ্রা দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছিল পুলিশ। ঘটনার তিন দিন পর ফাঁস হওয়া একটি অডিওতে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সেখানে জানা গেছে, আটক হওয়া ব্যক্তিরা আসলে প্রতারক নয়, বরং ভুক্তভোগী। অথচ তাদের কাছ থেকে পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে উল্টো তাদেরই প্রতারক সাজিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে।
ফাঁস হওয়া অডিওতে শোনা যায়, তথ্য সরবরাহকারী আকাশ নামে এক ব্যক্তি রাণীশংকৈল থানার এসআই শহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলছেন। আকাশ দাবি করেন, যাদের আটক করা হয়েছে তারা নির্দোষ ক্রেতা, ভুলবশত নকল সোনা কিনতে এসেছিল। তাদের কাছে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিল এবং পুলিশের সঙ্গে তার চুক্তি হয়েছিল—ধরিয়ে দিলে লাখে ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু পুলিশ টাকা দেয়নি। জবাবে এসআই শহিদুল ইসলাম বলেন, তাদের কাছে এত টাকা পাওয়া যায়নি, তিন লাখ টাকা পাওয়া গেছে এবং সেই টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। তখন তারা খুশি হয়ে ওসিকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। এতে আকাশ আপত্তি জানিয়ে বলেন, তারা তো কেউ টাকা ফেরত পায়নি, সবাই জেলে আছে, নির্দোষ মানুষদের প্রতারক বানানো হয়েছে। এসময় এসআই শহিদুল স্বীকার করেন, তারা সত্যিই নির্দোষ ছিল, তবে ওসির সিদ্ধান্তে মামলা দেওয়া হয়েছে।
১৩ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের ওই কল রেকর্ড সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। নেটিজেনরা সমালোচনা করে লিখেছেন, সরকার পরিবর্তনের পরও থানায় দোসররা বহাল তবিয়তে আছে, তারা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করছে। স্থানীয়রাও জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডের সত্যতা স্বীকার করে এসআই শহিদুল ইসলাম বলেন, ওসি সাহেবের নির্দেশেই আকাশের সঙ্গে তার কথা হয়েছে, এখানে তার কোনো দোষ নেই। রাণীশংকৈল সার্কেল এএসপি স্নেহাশীষ কুমার দাস জানান, ঘটনাটি অবগত হয়েছেন, তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে, তদন্ত চলছে, কেউ জড়িত থাকলে ছাড় দেওয়া হবে না এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাণীশংকৈল থানার ওসি আরশেদুল হক জানিয়েছিলেন, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সোনালি রঙের মূর্তি, পুরোনো রুপার মুদ্রা ও নগদ টাকাসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে এবং আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে নতুন অডিও ফাঁসের পর প্রশ্ন উঠেছে, যাদের প্রতারক বলা হয়েছিল তারা আসলে ভুক্তভোগীই কি না।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর