
যতো দিন যাচ্ছে দেশের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে—বিনিয়োগ কমছে, অস্থিরতা বেড়েই চলছে, মেধাশীল তরুণরা বিদেশে পাড়ি জমানোর জন্য উদগ্র। শাসন-সংস্থাগুলোতে দায়িত্বে থাকা অন্তবর্তী সরকারের কর্মকর্তারা কর্তব্য পালন না করে হঠাৎ প্রাপ্ত ক্ষমতা উপভোগে লিপ্ত—ফলে দেশ অস্থিতিশীলতার দিকে ধাবিত হচ্ছে।
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘যতো দিন যাচ্ছে ততোই কিন্তু পরিস্থিতি ঘোলাটে হচ্ছে। দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও আইনশৃঙ্খলার অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, পরিস্থিতি সম্পর্কে বিএনপিরই কোনো নেতার একক মন্তব্য নয়—এ প্রসঙ্গে তিনি দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মন্তব্যেরও দিকে ইঙ্গিত করেন, যিনি দ্রুত কাজ না হলে দেরি হলে পরিস্থিতি অনুকূল হবে না বলে সতর্ক করেছিলেন।
রুমিন বলেন, ‘মানুষ অধৈর্য হয়ে উঠছে; অধৈর্যের পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে আছে এবং আশঙ্কাজনক হারে কমছে—কারা ইনভেস্ট করবেন তারা একটি স্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখতে চায়, একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক সরকার দেখতে চায়।’
নেপালের উদাহরণ টেনে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘নেপালে মাত্র তিনজনের মন্ত্রিসভা হয়েছে এবং শপথগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই তারা বলল, আমাদের পরবর্তী প্রধান কাজ হলো নির্বাচন। তারা অনির্দিষ্টকাল দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। কেন ১২ বছরে সেখানে ১৪টা সরকার হয়েছে—এই প্রশ্নগুলো কি কেউ খুঁজেছে? পিআর পদ্ধতি কি দায়ী, নাকি অন্যান্য সামাজিক কারণ—এসব খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করা হয়নি। বরং তারা বলেছে, আমরা অন্তর্বর্তীকালিক দায়িত্বে এসেছি, কেবল একটা নির্বাচন দিয়ে আমরা চলে যাবো। বাংলাদেশে আমরা টালবাহানা দেখতে পাচ্ছি—টালবাহানা যে খুব ভালো নয়।’
অন্তবর্তী সরকারের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের দায়বোধের অভাবের কথাও উত্থাপন করেন রুমিন। তিনি বলেন, ‘আজকে ডক্টর আলী রিয়াজ বলেন—কেবল নির্বাচনই দেশে কোনো পরিবর্তন আনতে পারে না। তাহলে আমরা তো এক বছর পার করে দেখেছি নির্বাচন ছাড়া কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। সংবিধান সংস্কার, নারী-সংস্কার কমিশন, চিকিৎসা সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন—এসব গঠিত হয়েছে; প্রশাসন সংস্কারের জন্য পরামর্শও এসেছে এবং এসব সংস্কারের ব্যাপারে দলগুলো মোটামুটি একমতও হয়েছে। কিন্তু সেই সংস্কারের বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে?’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘আপনারা মূলত সামনে একটি বাবল তৈরি করতে চাইছেন—বলছেন আমি এটা করব, ওটা করব। বাস্তবে আপনি কিছু করছেন না। যা করছেন, তা হলো অবৈধভাবে পাওয়া ক্ষমতার স্বাদ উপভোগ করা—যা আপনি কখনোই পাওয়ার পরিবর্তে ছিল না।’
দেশের অবনতির তথ্য অঙ্ক হিসেবে তুলে ধরে রুমিন বলেন, ‘গত ৩৬৫ দিনে প্রায় ৩৭০–৩৮০টি মব ঘটনা হয়েছে। যদি বছরে ৩৭০–৩৮০টি মব ঘটে, ওই দেশে কোনো বিনিয়োগকারী স্থির থাকতে চাইবে না; সেখানে পাগলও বাস করতে চাইবে না। গত ৪০ বছরে দেশ থেকে ভয়াবহ হারে ব্রেইন ড্রেন হয়েছে—শিক্ষিত সমাজের অধিকাংশ সন্তান দেশের বাইরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। যারা দেশের শিরায়—শিক্ষিত পরিবার এখনও আছে, কিন্তু তাদের মধ্যেও দেশের ত্যাগের প্রবণতা বাড়ছে; অনেকেই ভাবছেন দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা।’
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর
রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর