
যশোরের অভয়নগরের সাবেক যুবদল নেতা ইনাম গাজীকে হত্যা চেষ্টা মামলায় বিএনপির সাবেক নেতা আসাদুজ্জামান জনিকে শোন-অ্যারেস্টের আদেশ দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আঞ্জুমান আরা বেগম আবেদনের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। আসাদুজ্জামান জনি গুয়াখোলা সুপারীপট্টি এলাকার কামরুজ্জামানের ছেলে।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, অভয়নগরের নওয়াপাড়ায় বিএনপির সাবেক নেতা জনি ও তার সহযোগীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন দলের লোকজনসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এর প্রতিবাদ করায় ইনাম গাজীর সঙ্গে জনির লোকজনের বিরোধ সৃষ্টি হয়। গত ৫ মার্চ বিকেলে ইনাম গাজী নওয়াপাড়া কাঁচাবাজারে গেলে জনির লোকজন তার ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা ইনাম গাজীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এ ঘটনায় ইনাম গাজী ৯ মার্চ ১৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে অভয়নগর থানায় মামলা করেন।
আসামিরা হলেন, সাইফুল, রিপন, কবির, পাপ্পু, মানু, রুহুল, তপু, তারিক, লিখন, সম্রাট, ইউসুফ, কামরুল, রুবেল, সুমন, ফাইম ও আদাস। মামলায় আসাদুজ্জামানকে হুকুমের আসামি করা হয়। আসাদুজ্জামান জনি অভয়নগর থানার একটি চাঁদাবাজি, অপহরণ ও মারপিট মামলায় যশোর কারাগারে আটক আছেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর ইনাম গাজী হত্যা চেষ্টা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি আসাদুজ্জামান জনি এ ঘটনায় জড়িত মর্মে আদালতে শোন-অ্যারেস্টের আবেদন করেন। গতকাল শুনানি শেষে বিচারক ওই আদেশ দেন।
জনির বিরুদ্ধে যত অভিযোগ : বিএনপি'র অভয়নগরের নওয়াপাড়া পৌর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনির বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিএনপি সমর্থক ব্যবসায়ী ইসরাইলের কাদিরপাড়া গ্রামের বাড়ি জোর করে দখল, লুট ও অগ্নিসংযোগ, শহরের তালতলায় ‘ব্রাইট ঘাট’ জোর করে দখল, ওই সময় ঘাটের শ্রমিক সরদার জাকির ও শ্রমিক উজ্জ্বল মাসুদের বাড়ির গরু ধরে নিয়ে বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
মাইলপোস্ট এলাকা থেকে ঠিকাদার নওশাদের এক ট্রাক পাথর লুটে নিয়ে বিক্রি করে দেয় জনির লোকজন। এর পরদিন ‘চাকলাদার ঘাট’ দখল এবং ৬০টি মোটর লুট ও মেহগনিগাছ লুট করা হয়।
১৫ অক্টোবর একটি লিখিত এজাহার দেন সরকার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু সাইদ সরকার। এতে বলা হয়, আগের দিন রাত ১০টার দিকে আসাদুজ্জামান জনির নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল হানা দেয় সরকার গ্রুপের কার্যালয়ে। তারা বাকিতে তিন ট্রাক কয়লা দেওয়ার জন্য চাপাচাপি করতে থাকে। রাজি না হওয়ায় সাইদ সরকারের ওপর চড়াও হয় দুর্বৃত্তরা।
৯ আগস্ট নওয়াপাড়া বাজারের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মৃত সিরাজুল ইসলাম খোকনের বাড়ির জমি দখল করে নেয় জনির লোকজন। শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আলীপুর এলাকার আওয়ামী লীগ ক্যাডার নজরুল খানকে টাকার বিনিময়ে অফিস প্রতিষ্ঠিত করে দেন জনি।
অভিযোগ, পাঁচ লাখ টাকা চুক্তিতে জনি নওয়াপাড়া হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফাল্গুন মণ্ডলকে পুনর্বাসিত করতে আসেন ১৯ আগস্ট। পতিত সরকারের দোসর ফাল্গুনকে দেখে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে বিক্ষোভ করেন। তখন এমরান হোসেন নামের এক শ্রমিককে জখম করে জনির লোকজন।
১৭ সেপ্টেম্বর চেঙ্গুটিয়ার মোসলেম সরদারের মালিকানাধীন ‘রাজধানী ঘাট’ দখল করে জনির লোকজন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বাহিনী লালন, মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, চোরাচালানের অভিযোগ করা হয়েছে।
তাঁকে মারধর ছাড়াও ক্যাশবাক্সে রক্ষিত নগদ প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। সাইদ সরকার এই বিষয়ে পুলিশ ছাড়াও বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও বিএনপি নেতাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর