
নড়াইল পৌরসভার মহিষখোলা এলাকার চিত্রা নদীর পাড়ে মহিষখোলা পুরাতন সাবরেজিস্ট্রি অফিস জামে মসজিদ ও মহিষখোলা সার্বজনীন পূজা মন্দির, একই আঙিনায় প্রায় চার দশক ধরে ধর্মীয় সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে। পাশাপাশি অবস্থিত এই দুই উপাসনালয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের ইবাদত ও হিন্দু সম্প্রদায়ের উপাসনা মিলেমিশে চলছে। সময়মতো আজান ও নামাজ আদায় হচ্ছে, নিয়ম করে চলছে পূজা-অর্চনাও।
স্থানীয়রা জানান, মহিষখোলা পুরাতন সাব রেজিস্ট্রি অফিস জামে মসজিদ ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর উত্তর-দক্ষিণমুখী মহিষখোলা সার্বজনীন পূজা মন্দিরটিও একই সময়ে নিজস্ব জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর পূজা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন এবং একই আঙিনায় মসজিদ ও মন্দির দেখে মুগ্ধ হন।
সরেজমিনে দেখা যায়, চিত্রা নদীর পাড়ে একটি ছোট মাঠের মধ্যে এই দুটি স্থাপনা বিদ্যমান। মাঠের পশ্চিম পাশে মসজিদ এবং উত্তর পাশে মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দির থেকে একটু সামনেই শরীফ আব্দুল হাকিম ও নড়াইল এক্সপ্রেস হাসপাতাল রয়েছে। মাঠের দক্ষিণ পাশে আছে একটি রাস্তা।
এলাকার স্থায়ী বাসিন্দারা জানান, তারা শান্তিপূর্ণভাবে হিন্দু-মুসলিম একই পরিবারের সদস্য হিসেবে বসবাস করছেন। ধর্ম নিয়ে তাদের মধ্যে কখনো কোনো বিরোধ হয়নি। এই এলাকার মানুষ মনেপ্রাণে অসাম্প্রদায়িক এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালনের পাশাপাশি অন্য ধর্মের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল।
মহিষখোলা সার্বজনীন পূজা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভংকর সরকার বলেন, প্রায় ৪৬ বছর ধরে এখানে পূজা ও নামাজ একই সাথে হচ্ছে এবং পূজা-অর্চনা করতে তাদের কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না।
মহিষখোলা পুরাতন সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয় জামে মসজিদের ইমাম মো. ইনামুল হক জানান, নামাজের সময় মন্দির কমিটি তাদের কার্যক্রম সীমিত রাখে। নামাজ শেষ হলে স্বাভাবিক নিয়মেই পূজা-অর্চনার কাজ চলে। এ নিয়ে কখনো কোনো দ্বন্দ্ব-সংঘাত হয়নি। তিনি ১২ বছর ধরে এই মসজিদে ইমাম হিসেবে আছেন এবং সবাই মিলেমিশে একে অপরকে সহযোগিতা করে বসবাস করছেন। মসজিদ ও মন্দির প্রায় ১০ গজ দূরে অবস্থিত এবং ওয়াজ মাহফিল বা পূজা চলাকালীন সময়ে উভয় সম্প্রদায় একে অপরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
নড়াইল নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার ফসিয়ার রহমান বলেন, ১৯৮১ সাল থেকে মসজিদ ও মন্দির পাশাপাশি রয়েছে। নামাজের সময় মন্দির কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যক্রম সীমিত রাখে। ছোটবেলা থেকেই তিনি দেখে আসছেন যে তারা সবাই মিলেমিশে একসঙ্গেই বসবাস করছেন। তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তারা সার্বিক সহযোগিতা পান এবং মন্দির যখন পূজা হয়, তখন তারাও সার্বিক সহযোগিতা করে আসছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, এবারের অনুষ্ঠান আরও সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে।
নড়াইল জেলা পূজা উদযাপন কমিটি জানিয়েছে, এ বছর জেলার তিনটি উপজেলায় ৫২৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। নড়াইল সদর উপজেলায় ২৩৯টি, লোহাগড়া উপজেলায় ১৪৪টি এবং কালিয়া উপজেলায় ১৪১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। তারা আশা করছেন, প্রতি বছরের মতো এ বছরও নড়াইলে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন হবে।
সর্বশেষ খবর
এক্সক্লুসিভ এর সর্বশেষ খবর