
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চল দিনারপুরের রুকনপুরে পাহাড় কাটার মহোৎসব চলছে। পাহাড়ের লাল মাটি উচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। সম্প্রতি রুকনপুরে পাহাড় কাটার ঘটনায় একই পরিবারের ৪ ভাইকে আসামি করে নবীগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় আরও ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। অভিযানের সময় আটক মাটি কাটার এক্সক্যাভেটর মেশিন মালিকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার রাতে উপজেলা পানিউমদা ভূমি অফিসের তহসিলদার তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। জানা গেছে, স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেনের নেতৃত্বে গত ৫ দিন ধরে পাহাড় কাটা অব্যাহত রয়েছে। নবীগঞ্জ উপজেলার রুকনপুরে পাহাড় কেটে মাটির রমরমা ব্যবসা করছে একটি অসাধু চক্র। প্রশাসনের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাতে এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি উত্তোলন করছে চক্রটি। এতে ৩-৪টি ট্রাক্টর প্রতিদিন মাটি বহন করে। ফলে এলাকার রাস্তাঘাট ভেঙে পড়ছে। এছাড়া পাহাড় কাটার মেশিনের শব্দ ও ট্রাক্টরের চলাচলের শব্দে স্থানীয় লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। তাদের ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না। পাহাড় কাটার সরকারি কোনো অনুমতি না থাকলেও দেদারছে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রতি গাড়ি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা মূল্যে মাটি বিক্রি করা হয়। এতে করে গত কয়েকদিনে কয়েক লাখ টাকার মাটি বিক্রি করেছে চক্রটি। স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হাসান ও শাহ আহিদুর রহমান বলেন, রাতের আঁধারে এক্সক্যাভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছে কয়েকজন প্রভাবশালী। এতে প্রতিদিন ট্রাক চলাচল করায় ঘুম ভেঙে যায়। এছাড়া রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা চান প্রশাসন যেন মাটি কাটা বন্ধে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
বুধবার রাতে নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নের রুকনপুর গ্রামে অভিযান পরিচালনা করেন নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রত্যয় হাশেম। তিনি এসময় একটি মাটি কাটার মেশিন এক্সক্যাভেটর আটক করেন। পরে এক্সক্যাভেটরটি মালিকের জিম্মায় ছেড়ে দিয়ে মাটি কাটার সঙ্গে সম্পৃক্ত ৪ ভাইকে আসামি করে ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা রেখে নিয়মিত মামলার জন্য নবীগঞ্জ থানায় চিঠি পাঠান। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে গভীর রাতে নবীগঞ্জ থানায় মামলা নম্বর ০১, তারিখ: ০১/১০/২০২৫, ধারা: বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ২০১০ এর ১৫(১) এর ১/১৫(১) এর ৮/১৫(১) এর ১২ ধারায় রুজু করা হয়। আসামিরা হলেন: রুকনপুর গ্রামের মৃত মফিজ উল্লাহর পুত্র আলী হোসেন, আমির হোসেন, আবির হোসেন, জাকির হোসেন।
এদিকে, অপর একটি সূত্র জানায়, একই উপজেলার দিনারপুরে ও পার্শ্ববর্তী বাহুবল উপজেলার পুটিজুরীসহ বিভিন্ন এলাকায় মাটি উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মাটি উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে চক্রটি।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ কামরুজ্জামান বলেন, "নবীগঞ্জে টিলা থেকে মাটি উত্তোলনের ঘটনায় ৪ জনের নাম উল্লেখ করে ১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রত্যয় হাশেম বলেন, "আমরা তাৎক্ষণিক খবর পেয়ে অভিযান চালাই। এসময় কাউকে পাওয়া যায়নি, একটি মাটি কাটার মেশিন এক্সক্যাভেটর শুধু পাওয়া যায়। পরে তদন্ত করে জানি এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি ৪ জন জড়িত আছেন। তাদের নাম উল্লেখ করে ১২ জনকে আসামি করে মামলা করার জন্য নবীগঞ্জ থানায় চিঠি প্রেরণ করি। এর প্রেক্ষিতে নবীগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে।"
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, "আমরা ৪ জনের নাম উল্লেখ করে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। পাহাড়-টিলা কাটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। মাটি কাটার এক্সক্যাভেটর মেশিনটি মালিকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।"
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর