
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তীব্র যানজটের কারণে সিলেট বিভাগের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। তিন ঘণ্টার রাস্তা পার হতে সময় লাগছে বারো ঘণ্টা।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) নবীগঞ্জ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে যেতে যেখানে দুই ঘণ্টা লাগার কথা, সেখানে আট ঘণ্টা সময় লেগেছে। গত বুধবার ভোর ছয়টা থেকে গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত টানা দুই দিন ধরে এই মহাসড়কে যানজট দেখা গেছে।
হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি গোলচত্বর থেকে শায়েস্তাগঞ্জ গোলচত্বর, শায়েস্তাগঞ্জ থেকে মাধবপুর, সরাইল বিশ্বরোড মোড়, শাহবাজপুর সেতু হয়ে হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকায় এই যানজট বিস্তৃত হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ যানজট দেখা গেছে শায়েস্তাগঞ্জ থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত। এছাড়া ঢাকা যাওয়ার পথে নরসিংদী, মাধবদী, কাঁচপুর ও নারায়ণগঞ্জ বিশ্বরোডেও যানজট রয়েছে।
বাংলাদেশের আলোচিত ইসলামি বক্তা মুফতি গিয়াস উদ্দিন তাহেরী জানান, তিনি যানজটের মধ্যে পুরো এক রাত আটকে ছিলেন। তার মতে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ থেকে নবীগঞ্জ আউশকান্দি ও শায়েস্তাগঞ্জ মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা যানজট থাকে এবং এই বিষয়ে দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, পরিকল্পনা ছাড়াই মহাসড়কের নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় প্রতিদিন যানজট হচ্ছে। মহাসড়কের নির্মাণ কাজে বড় আকারের গর্ত ও কোনো ডাইভারশন না থাকাই যানজটের প্রধান কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে গত দুই দিন দেখা গেছে, মহাসড়কের নির্মাণ কাজের বিভিন্ন অংশে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড গোলচত্বর ও শায়েস্তাগঞ্জ নতুন সেতু এলাকা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই জায়গাটি অতিক্রম করার জন্য চালকদের অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। ফলে দূরপাল্লার যানবাহন মহাসড়কের গোলচত্বর এলাকায় এসে থেমে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পর সেখানে গর্তে যানবাহন আটকে যাচ্ছে, কোনোটি আবার বিকল হয়ে পড়ছে।
গতকাল বুধবার দিবাগত রাত থেকে মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। গতকাল শুক্রবার ভোর ছয়টার পর থেকে যানজট বাড়তে থাকে। বিকেল পর্যন্ত নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি থেকে শায়েস্তাগঞ্জ, মাধবপুর, আশুগঞ্জ গোলচত্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের বিস্তৃতি ঘটে। গত দুই দিনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কেও যানজট ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে।
নবীগঞ্জ উপজেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহ শামীম আলম বলেন, শত শত নারী-পুরুষকে হেঁটে গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে। গতকাল দিনভর মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কম চলাচল করতে দেখা যায়। হবিগঞ্জসহ নবীগঞ্জ, বাহুবলসহ সিলেট বিভাগের দূরপাল্লার যানবাহনের হাজারো মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
জামাল উদ্দিন তাহেরী নামে একজন ফেসবুকে লাইভে জানান, তিনি পাঁচ কিলোমিটার পায়ে হেঁটেও যানজট মুক্ত হতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটে নাকাল হয়ে অনেক যাত্রী তাঁর মতো পায়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন।
সিলেট থেকে ঢাকাগামী পণ্যবাহী নবীগঞ্জের ট্রাকচালক আমির হোসেন বলেন, "রাত ২টায় ছিলাম চান্দুরা আর এখন বেলা ১১টায় আছি বিশ্বরোড এলাকায়। মনে হচ্ছে আমরা কারও কাছে জিম্মি হয়ে আছি। একটু জায়গা ঠিক করে ডাইভারশন করে দিলে আমরা ভালো করে চলতে পারি, কিন্তু তা হচ্ছে না।"
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা হানিফ বাসের চালক রহিম আলী বলেন, "আমাদের কপাল খারাপ। না হলে মাসের পর মাস ধরে এইখানে এ দশা কেন হবে! এইখানে আসলেই আমাদের ঝামেলা হয়।" তিনি আরও যোগ করেন, "আইলাম রাতে অখন দুপুর ১২টা বাজে যাত্রীদের নিয়া বসে আছি। কত কষ্ট কওয়া যায় না ভাই।"
এ ব্যাপারে শেরপুর হাইওয়ে থানার ওসি দেওয়ান আবু তাহের বলেন, "আমরা এসব যানজট রোধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই। আমার এলাকা নবীগঞ্জে খুবই কম যানজট হয়।" শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, "আমার এলাকায় যানজট হয় মূল মহাসড়কের সেতুগুলো নির্মাণের জন্য কাজ চলছে তাই।
আমরা যানজট নিরসনে সবসময় কাজ করছি।" সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, "ভোর ছয়টা থেকে রোডে আছি। এখন পর্যন্ত কিছু খাইনি। পা ফুলে গেছে। কিছুক্ষণ পর পর গর্তে যানবাহন আটকে যাচ্ছে। এক একটি যানবাহন ওঠাতে পাঁচ থেকে দশ মিনিটও সময় লাগে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি মহাসড়কটিকে যানজটমুক্ত রাখতে। কিন্তু পারছি না। কয়েক দিন পর পর ইট দিয়ে গর্ত ভরাট করেছি। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি।"
সড়ক ও জনপথ (সওজ), জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কের ৫০.৫৮ কিলোমিটার অংশকে ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ পাঁচ বছর ধরে ধীরগতিতে চলছে। ৫ আগস্টের পর কাজের গতি আরও কমে যায়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের সিলেট অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন বলেন, সেতু ও কালভার্টগুলো পরিকল্পনা করেই তৈরি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, হয়তো শ্রমিক সংকটের কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ ধীরগতিতে করছে। তিনি দ্রুততম সময়ে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করছেন।
তিনি জানান, নির্মাণ কাজ চললে জনদুর্ভোগ সামান্য কিছু হয় এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, "আমরা এখনও সর্বোচ্চ ১৫% ভাগ কাজ করেছি।
আমরা কাজের গতি বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পেয়েছি। কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে কাজ চলমান রয়েছে।"
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর