
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন একাধিক নেতা।
দলীয় কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ, মাঠের আন্দোলনে সক্রিয়তা এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজেদের প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন।
মনোনয়ন দৌড়ে পুরনো ও পরীক্ষিত নেতৃত্বের পাশাপাশি তরুণ, উদীয়মান এবং আইনজীবী নেতারাও নিজেদের অবস্থান জানান দিতে শুরু করেছেন। ঠাকুরগাঁও-৩ আসন, যা রাণীশংকৈল-পীরগঞ্জ উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত, সেখানে বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি বিগত সময়ের চেয়ে বর্তমানে যথেষ্ট শক্তিশালী।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দেখে বোঝা যায়, প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে দলের জন্য অবদান রেখেছেন এবং দলের সংকটকালে ত্যাগ স্বীকার করেছেন।
সম্প্রতি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাহিদুর রহমানকে মুঠোফোনে চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন ঘোষণা করেছেন — এমন একটি বার্তা শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তবে নেতাকর্মীরা বলছেন, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই এবং বিষয়টি আদৌ সত্য কিনা তা নিয়ে তারা সন্দিহান।
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনটি ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। তবে জোটগত কারণে বরাবরই জাতীয় পার্টি ও ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছাড় দেয় দলটি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের ২৭ বছর পর ২০১৮ সালে আসনটি দখলে নিয়েছিলেন বিএনপি নেতা জাহিদুর রহমান।
তবে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি থেকে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় প্রার্থী চূড়ান্তকরণে এখনও জটিলতা রয়েছে। অন্যদিকে, জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো একক প্রার্থী ঘোষণা করে স্বস্তিতে রয়েছে।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন দৌড়ে উঠে এসেছে কয়েকজন নতুন মুখ। তাদের মধ্যে রয়েছেন- ঠাকুরগাঁও বারের সভাপতি ও জেলা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট জয়নাল আবেদীন, সাবেক ছাত্রনেতা ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম জিয়া, যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামাল আনোয়ার আহাম্মদ, রাণীশংকৈল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আল্লামা আল ওয়াদুদ বিন নূর আলিফ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট শাখার সদস্য ব্যারিস্টার মোহাম্মদ রুকুনুজ্জামান।
এরমধ্যে পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. জাহিদুর রহমান এই আসনের রাজনীতিতে সুপরিচিত ও অভিজ্ঞ এক নাম। তিনি ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, যা তার জনপ্রিয়তা ও জনআস্থার প্রমাণ বহন করে। পীরগঞ্জে বিএনপির যে শক্তিশালী ভিত্তি এখনো টিকে আছে, তার পেছনে তার দীর্ঘদিনের পরিশ্রম ও নেতৃত্বের বড় ভূমিকা রয়েছে।
দলটির নেতাকর্মীরা জানান, নতুনদের মধ্যে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ এবং পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া দুজনেই দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত থেকে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। জিয়াউল ইসলাম জিয়া আওয়ামী লীগের সময়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে জনসাধারণের কিছু কাজ করেছেন, তাই এ উপজেলার জনসাধারণ তার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধে আবদ্ধ। দলের আন্দোলন-সংগ্রামের কঠিন সময়গুলোতে তারা রাজপথে থেকেছেন, কর্মীদের সংগঠিত করেছেন এবং নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। দলেও তাদের গ্রহণযোগ্যতা যথেষ্ট।
অন্যদিকে, যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী নেতা কামাল আহম্মেদ আনোয়ার এবার এ আসনে দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে তার বিরুদ্ধে ৭৯টি রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হয়েছিল এবং তিনি বহুবার কারাবরণ করেছেন। ত্যাগ ও আদর্শের এমন উদাহরণ মাঠের কর্মীদের কাছে তাকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। তরুণ নেতৃত্ব হিসেবে পরিচিত কামাল আহম্মেদ আনোয়ার নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে পারেন।
এছাড়াও, আইনজীবী সমাজ থেকে আসা এডভোকেট জয়নাল আবেদীন ও ব্যারিস্টার রোকনুজ্জামান বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্বের প্রতীক হতে পারেন, যারা নীতিগতভাবে দলের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এডভোকেট জয়নাল আবেদীন ফ্যাসিস্ট আমলের ১৭ বছরে ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপি-জামায়াত নেতাদের মামলা বিনা পয়সায় চালিয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। ভালো মানুষ হিসেবে তার যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
ব্যারিস্টার মোহাম্মদ রুকুনুজ্জামান রাণীশংকৈল-পীরগঞ্জকে একটি আধুনিক ও উন্নত জীবনযাত্রার উপযোগী এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মনোনয়ন পাওয়ার আশায় প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি এ জেলার সর্বপ্রথম ব্যারিস্টার।
একইভাবে, রাণীশংকৈল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আল ওয়াদুদ বিন নূর আলিফ স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় এবং সংগঠন শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখছেন। তিনি ছাত্রাবস্থা থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
এখন ভোটারদের মূল প্রশ্ন হলো — এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন কে পাবেন?
তারা বলেন, বিএনপি দল হিসেবে যেহেতু দীর্ঘবছর কঠিন সময় পার করেছে। তাই মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘ত্যাগ, সাংগঠনিক গ্রহণযোগ্যতা, জনসম্পৃক্ততা এবং মাঠে লড়াই করার সক্ষমতা’ — এই চারটি বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে।
অভিজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠিত নেতা জাহিদুর রহমানের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, সংগঠনের প্রতি দায়বদ্ধতা ও ভোটারদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক তাকে স্বাভাবিকভাবেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে। তবে বিএনপির ভেতরে এখন একটি নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বও শক্তভাবে আত্মপ্রকাশ করছে। সেই তরুণ ও উদ্যমী নেতাদের মধ্যে যদি কেউ মাঠপর্যায়ে কর্মীদের আরও সক্রিয় ও ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হন, তবে তার পক্ষে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
রাণীশংকৈল-পীরগঞ্জ উপজেলার দু’টি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৫৪ জন। এ জেলার প্রতিটি আসনই রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর