
নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দলকে জাতীয় ফুল ‘শাপলা’ প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দেবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসিরউদ্দীনের কমিশন সর্বসম্মত হয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে জাতীয় ফুল শাপলা সংরক্ষিত থাকছে।
ইসি মনে করছে, কোনো দল যদি শাপলা বরাদ্দ পায়, তবে তাতে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে; এমনকি মামলাও হতে পারে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। এ-সংক্রান্ত ইসির নথি আমার দেশ-এর হাতে রয়েছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর এনসিপি ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগকে নিবন্ধনযোগ্য দল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সে সময় এনসিপিকে ৫০টি প্রতীকের নমুনা পাঠিয়ে সেখান থেকে একটি বেছে নিতে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দিয়েছিল ইসি; সে সময়সীমা আজ শেষ হচ্ছে।
নাটোরের কানাইখালীতে জেলা সমন্বয় সভায় গতকাল সোমবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, যে নির্বাচন কমিশন একটি দলকে একটি মার্কা দেওয়ার মতো শক্ত মেরুদণ্ড প্রদর্শন করতে পারে না, তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতেও সক্ষম হবে না। এর আগে চিঠি পেয়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী একে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছিলেন। এনসিপি নেতাদের এসব বক্তব্যকে রাজনৈতিক হিসেবে দেখছে কমিশন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নির্বাচন কমিশনার জানান, জাতীয় ফুল ‘শাপলা’ একটি দলকে দেওয়া হলে তখন এর মর্যাদা-অমর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। নির্বাচনের পোস্টার করা হলে এটা পায়ের নিচে পড়ে গড়াগড়ি খাবে। দেখা যাবে সাধারণ একজন এটা গাড়িতে লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তখন এর অমর্যাদা হবে। এটির আইনগত মর্যাদা রক্ষা করা না গেলে প্রতীকের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে।
তারা আরো জানান, পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ১৫-২০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই শাপলা ব্যবহার হয়। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পাসপোর্টে, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে, এনআইডিতে জলছাপ হিসেবে ও সংসদ ভবনের সম্মুখে।
একজন কমিশনার বলেন, এনসিপি কিংবা অন্য যেকোনো দলকে জাতীয় ফুল শাপলা প্রতীক দিলে সংক্ষুব্ধ যে কেউ ইসির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। তখন এর দায় কে নেবে?
সংবিধানের ৪(৩) অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে ইসি তাদের ব্যাখ্যায় বলেছে, সংবিধান অনুযায়ী মূল জাতীয় প্রতীক হচ্ছে শাপলা। সংবিধানের ৪(৪) অনুচ্ছেদে জাতীয় সংগীত, পতাকা ও প্রতীকের অননুমোদিত ব্যবহার নিষিদ্ধ উল্লেখ আছে। আর অপরাধ হিসেবেও এটা চিহ্নিত হয়। এ কারণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জাতীয় পতাকার পাশাপাশি জাতীয় প্রতীক শাপলা চিহ্নিত পতাকা দণ্ডায়মান রাখা হয়। তাছাড়া বহু সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের লোগোতে এই প্রতীক ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইসি তাদের ব্যাখ্যায় বলছে, কোনো রাজনৈতিক দলকে এই প্রতীক বরাদ্দ দিলে তিনটি গুরুতর সমস্যা হবে। এগুলো হচ্ছেÑজাতীয় পরিচয়পত্রে ব্যবহৃত প্রতীক কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত হলে সাধারণ মানুষের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হবে এবং রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্রের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ভোটারের মনে হতে পারে এটা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
ফলে নির্বাচনি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হওয়া ও জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। শাপলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হলে সংবিধানের নিরপেক্ষতা ও ন্যায়সংগত নির্বাচন নীতির পরিপন্থী হবে।
এ কারণে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ‘নাগরিক ঐক্য’কে শাপলা প্রতীক দেয়নি ইসি। আগামীতেও কোনো দলকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ করা অসমীচীন ও অযৌক্তিক হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জাতীয় এর সর্বশেষ খবর