
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গত সাত দিন ধরে চলা তীব্র যানজট হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেছে। জানা গেছে, সড়ক ও পরিবহন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বুধবার নবীগঞ্জের আউশকান্দি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড অংশ পরিদর্শনে আসছেন।
স্থানীয় লোকজনের দাবি, উপদেষ্টার আগমন উপলক্ষে এই সড়কে তড়িঘড়ি করে সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। গত ৪ অক্টোবর দৈনিক স মকাল ও অনলাইন বিডি২৪লাইভ ডটকম পত্রিকায় "নির্মাণকাজ চলছে ধীরলয়ে, যানজটে নাকাল যাত্রীরা" শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশের পর সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয় নড়েচড়ে বসে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্র জানায়, গত শনিবার থেকে অস্থায়ী সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। বিশ্বরোড গোলচত্বরে কয়েক স্তরে ইট ও বালু বিছানো হয়েছে। টানা সাত দিন ধরে ঐ এলাকায় তীব্র যানজটের কবলে পড়েছিলেন যাত্রীরা। সংবাদ প্রকাশের পরপরই দ্রুত সংস্কার কাজ চলছে। আজ বুধবার মহাসড়কের কাজে কেন ধীরগতি, তা জানতে ও দেখতে উপদেষ্টা সরাসরি পরিদর্শন করছেন।
মহাসড়কের সিলেটমুখী শায়েস্তাগঞ্জ মোড় হয়ে নবীগঞ্জের আউশকান্দি পর্যন্ত ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থে তিন স্তরে ইট ও বালু বিছানোর কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এর মধ্যেই এ কাজের তদারকি করতে ১২ সদস্যের কমিটি গঠন ও মহাসড়কের মধ্যে একটি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে কাজ করাচ্ছেন।
গতকাল দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যানজট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। তীব্র যানজট সৃষ্টির ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী ও যানবাহন চালকরা। আজ উপদেষ্টা আসবেন বলে যানজট কিছুটা কম আছে, কারণ ট্রাফিক পুলিশ সক্রিয়।
এদিকে, যানবাহনের দীর্ঘ সারিতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের। শত শত যাত্রীকে গত কয়েকদিন হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। এতে জেলার অভ্যন্তরীণ এবং দূরপাল্লার যানবাহনের হাজারো মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। আজ হঠাৎ করে যানজট না থাকায় অনেকেই অবাক হয়েছেন।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মধ্যে তীব্র যানজট ছিল। ৩ ঘণ্টার রাস্তা ১২ ঘণ্টায়ও পার হওয়া যাচ্ছিল না। বিশেষ করে সিলেট বিভাগের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। গতকাল শুক্রবার নবীগঞ্জ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে যেতে সময় লেগেছে ৮ ঘণ্টা, যেখানে ২ ঘণ্টায় যাওয়ার কথা।
এদিকে, মহাসড়কে টানা দুই দিন ধরে দীর্ঘ যানজট চলছিল। হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি গোলচত্বর থেকে শায়েস্তাগঞ্জ গোলচত্বর। শায়েস্তাগঞ্জ থেকে মাধবপুর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় ও শাহবাজপুর সেতু হয়ে হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকায় গত মঙ্গলবার ভোর ছয়টা থেকে গতকাল রাত পর্যন্ত যানজট দেখা গেছে।
সবচেয়ে ভয়াবহ যানজট হচ্ছে শায়েস্তাগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে আশুগঞ্জ পর্যন্ত। মহাসড়কের নির্মাণ কাজে বড় আকারের গর্ত ও কোনো ডাইভারশন না থাকায় এ যানজটের প্রধান কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে গত দুই দিন দেখা গেছে, মহাসড়কের নির্মাণ কাজের বিভিন্ন অংশে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের কয়েকটি স্থান বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড গোলচত্বর ও শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রীজ এলাকা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
জায়গাটি অতিক্রম করার জন্য চালকদের অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। ঢাকা থেকে সিলেটগামী পণ্যবাহী একটি ট্রাককে আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি টোল প্লাজা, শায়েস্তাগঞ্জ গোলচত্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড গোলচত্বর এলাকায় বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
নবীগঞ্জ উপজেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহ শামীম আলম বলেন, শত শত নারী-পুরুষকে হেঁটে গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে। গতকাল দিনভর মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কম চলাচল করতে দেখা গেছে। হবিগঞ্জসহ নবীগঞ্জ, বাহুবলসহ সিলেট বিভাগের দূরপাল্লার যানবাহনের হাজারো মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, "ভাই, আজকে কোনো যানজট নেই লিখতে পারেন, উপদেষ্টা আসছেন তাই ব্যস্ত আছি।"
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের সিলেট অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন বলেন, সড়ক ও পরিবহন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান আসবেন বলে আমরা দ্রুত কিছু কাজ করছি।
সেতু ও কালভার্টগুলো পরিকল্পনা করেই তৈরি করা হচ্ছে। আমরা কাজের গতি বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেয়েছি। কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে কাজ চলমান রয়েছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর