
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে নারী বান্ধবীর ফেসবুকে মন্তব্য করাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত নয়জন আহত হয়েছেন। এ সময় তথ্য সংগ্রহকালে এক সাংবাদিকের প্রেস কার্ড ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়েছে বিক্ষুব্ধরা।
গত রোববার রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। আহতদের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কিছুদিন যাবত এক নারী বন্ধুকে নিয়ে পীরগঞ্জ পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব জীবন হামিদ ও ছাত্রদল কর্মী শ্রাবণ-শুভ গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছিল। ওই বান্ধবীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) পোস্ট ও মন্তব্য করায় গত রোববার রাতে তারা দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে উভয় পক্ষ লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে একে অপরের ওপর হামলা চালায়। দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে দোকানপাট বন্ধ করে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকেন।
এ সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা দৈনিক কা’লবে’লার উপজেলা প্রতিনিধি মো. বাদল হোসেনকে লাঞ্ছিত করেন এবং তাঁর মোবাইল ফোন ও প্রেস কার্ড ছিনিয়ে নেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সাংবাদিক বাদল হোসেন বলেন, ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ভিডিও ধারণকালে যুবদলের লিয়নসহ কয়েকজন আমাকে ঘিরে ধরে। এ সময় আমার মোবাইল ফোন ও গলায় থাকা আইডি কার্ড তারা কেড়ে নেন। এ ছাড়া, তারা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালও করেন।
তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন ধরেই এক মেয়ে বন্ধুকে নিয়ে তাঁদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট, এমনকি মন্তব্য পর্যন্তও চলে। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
সাংবাদিক লাঞ্ছনার ঘটনার ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানান জেলার গণমাধ্যমকর্মীরা। তাঁরা অবিলম্বে লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, সাংবাদিকের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় লাঞ্ছিত করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দায়িত্ব পালনকালে লাঞ্ছিত হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক।
এ বিষয়ে উপজেলার ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁদের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. কায়েস সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি এখনো বিস্তারিত জানতে পারিনি। এটা নিয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কাউকে ক্ষমা করা হবে না। অবশ্যই সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হালিম খান বলেন, মেয়ে বান্ধবীর ফেসবুক পোস্টে মন্তব্য করাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে অনেকে আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলেই তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সংঘর্ষে লিপ্ত ব্যক্তিরা কোনো রাজনৈতিক দলের কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের নন। দেখে মনে হবে তারা স্কুলের ছাত্র। স্থানীয় বিএনপির নেতারা ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। তাঁরাও তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর