
সাম্প্রতিককালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের ২০ শতাংশ বাসা ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা এবং উৎসব ভাতা ৭৫% বৃদ্ধির দাবিতে নিজ নিজ কর্মস্থলে কর্মবিরতি চলছে।
দাবি বাস্তবায়নে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিচ্ছেন। তাঁদের এই দাবি যৌক্তিক। একজন শিক্ষক যখন আর্থিক অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তাঁর কাছ থেকে শতভাগ মনোযোগ ও মানসম্মত শিক্ষা আশা করা কঠিন। তাই বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বাসা ভাড়া বৃদ্ধি, চিকিৎসা ব্যয়সহ জীবনযাত্রায় তাঁদের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁদের এই দাবি অযৌক্তিক নয়।
তবে দাবি আদায়ে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা নিজ নিজ কর্মস্থলে কর্মবিরতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বঞ্চিত করায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক কর্মচারীদের আন্দোলনে লাগাতার কর্মবিরতিতে দিনের পর দিন একের পর এক ক্লাস বন্ধসহ পাঠসূচিতে বিঘ্ন ঘটায় পরীক্ষার সিলেবাস ও সময়সূচি নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছে ছাত্রছাত্রীরা।
শুধু তা-ই নয়, শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পাঠ্যজ্ঞান থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তারা মানসিকভাবে পড়ালেখা থেকে আগ্রহ হারিয়ে তাদের মূল্যবান সময়টুকু শিক্ষার্জনে শ্রেণীকক্ষে ব্যয় করার সুযোগ না পেয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ভুল পথে সময় ব্যয় করার সুযোগ পাচ্ছে। তাই তাঁদের এই যৌক্তিক দাবি নিয়ে প্রশ্ন হচ্ছে, শিক্ষক কর্মচারীদের আন্দোলন ও কর্মবিরতির ফলে ক্লাস বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা তাদের গন্তব্য ভুলে যদি অপরাধকাণ্ডে জড়িয়ে যায়, তাহলে তাদের এই অপূরণীয় ক্ষতির দায় কে নেবে?
শিক্ষক কর্মচারীদের আন্দোলন ও কর্মবিরতি মতে তাঁদের যৌক্তিক দাবি পূরণ না করায় এর জন্য সরকারই দায়ী। অপরদিকে সরকার কর্তৃপক্ষ বলবে—সীমিত বাজেট, সমস্যা সমাধানে আলোচনা চলমান। এ অবস্থায় চলমান আন্দোলন ও সরকার কর্তৃক দাবি পূরণে কালক্ষেপণ এই দুয়ের মাঝে বলি হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ।
এমন পরিস্থিতিতে সরকার ও শিক্ষাব্যবস্থার নীতিনির্ধারকদের মনে রাখতে হবে—শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড; আর সে শিক্ষার পাঠদানকারী হচ্ছে আমাদের শিক্ষক সমাজ, তাই তাঁদের ন্যায্য দাবি পূরণে কালক্ষেপণ না করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আর শিক্ষকদেরও ভাবা দরকার—তাঁরা শুধু রাষ্ট্রের বেতনভোগী নন, তাঁরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নির্মাতা; তাই তাঁদের উচিত হবে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে এমন কর্মসূচি গ্রহণ করা, যাতে শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে পাঠ্যজ্ঞান অর্জনে ন্যূনতম ক্ষতি না হয়।
এমতাবস্থায় শিক্ষাঙ্গনে চলমান এই সংকটে শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার নীতিনির্ধারকসহ আন্দোলনকারী উভয় পক্ষের উচিত হবে শিক্ষাঙ্গনের এই সংকট উত্তরণে আলোচনা ও সহানুভূতিভিত্তিক সমাধান প্রতিষ্ঠা করে আগামীতে একটি ন্যায়ভিত্তিক শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনে শিক্ষার্থীদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা। এই সংকট উত্তরণে পথ খুঁজে না পেলে সে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যজ্ঞান অর্জন ব্যাহত হলে সরকার ও শিক্ষাব্যবস্থার নীতিনির্ধারকসহ শিক্ষকেরা এর দায় এড়াতে পারেন না।
তাই এখনই সময়—দ্রুতই উভয় পক্ষের আন্তরিক আলোচনার মাধ্যমে ন্যায্যতার ভিত্তিতে এমন সমাধান খুঁজে বের করা, যাতে শিক্ষাব্যবস্থাকে কার্যকর ও শিক্ষকের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে শিক্ষার্থীরাও যেন তাদের শ্রেণীকক্ষে কাঙ্ক্ষিত পাঠ্যজ্ঞান অর্জন থেকে বঞ্চিত না হয়।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
খোলা কলাম এর সর্বশেষ খবর