কোন রূপ কথার গল্প অথবা উপন্যাসের কথা নয় মাত্র দু-ভরি সোনার মূল্যতেই নির্ধারিত হয়েছে একটি জীবনের মূল্য। জীবনের দাম কতটাই না সহজ, মূহুর্তের মধ্যে চোখের পলকেই একটি জীবন ধ্বংস হয়ে গেল, হয়তো ক্ষণিকের জন্য একটু অপেক্ষায় ছিল আর এই মুহূর্তেই মেট্রোরেলের পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড পড়ে একটা জীবন নিমিষেই একদম শেষ হয়ে গেল, আর অতি সহজে এই জীবনের মূল্যও নির্ধারিত হয়ে গেল। নিহতের পরিবারকে দেওয়া হবে ৫ লক্ষ টাকা, একটি জ্বলন্ত প্রদীপ নিভে গেল আর তার মূল্য মাত্র দু-ভরির একটু বেশি সোনার মূল্যতেই প্রায় নির্ধারিত হয়ে গেল।
পৃথিবীর সকল মায়া, স্ত্রী সন্তানদের ভালোবাসা, দুটি অবুঝ সন্তানের হৃদয় স্পর্শী মায়া ভরা মুখ- সবকিছু ছেড়ে এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে হলো। সন্তান দুটির মুখের দিকে তাকাতেই যেন বুকের ভেতরটা হু হু করে কেঁদে ওঠে। তাদের বাবা এই পৃথিবী থেকে চলে গেছে এতটুকু বোঝার ক্ষমতাও সন্তানের হয়নি, ছেলে আব্দুলাহর বয়স চার বছর, মেয়ে সুরাইয়া আক্তারের বয়স তিন বছর মাত্র, পৃথিবী সম্পর্কে কিছুই বোঝে না, কিছুই জানে না, এই পৃথিবীর সবচেয়ে আপন জনের মধ্যে অন্যতম প্রিয় বাবা তাদের ছেড়ে চলে গেল অথচ তারা কিছুই বুঝতে পারল না জানতে পারলো না। তাদের বোঝার সেই ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা এখনো দেননি। বাবার মুখের স্মৃতিটাও হয়তো তাদের মনে থাকবে না, বাবা হারানোর যন্ত্রণার গ্লানি নিয়ে তাদেরকে বেড়ে উঠতে হবে, জীবনের সাথে কঠোর যুদ্ধ করে তাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে, তাদের বাবা চলে গেছে- এই পৃথিবীর সবাই জানলেও তারা কিছুই বুঝতে পারল না। সত্যি সময়ের নির্মমতা বড়ই নিষ্ঠুর।
জীবনের মূল্য দুই ভরি সোনাতেই নির্ধারিত হয়ে গেছে। কিছুই বলার নেই কিছুই করার নেই, তবে এমন মৃত্যু ও এমন মূল্য মেনে নেওয়া সত্যিই কষ্টকর। এভাবে একটি জীবন চলে যাবে নিমিষেই, এটা হয়তো কেউই মেনে নিতে পারেনি। স্বামীর এমন মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি তার আদরের স্ত্রী, বিবাহটাও হয়তো অল্প কয়েক বছর আগেই সম্পূর্ণ হয়েছে, স্ত্রী সন্তান নিয়ে সুখের সংসার হয়তো দিনাতিপাত করছিল, কিন্তু সময়ের কড়াল ঘ্রাস এমন সুখ সহ্য করেনি, খুব দ্রুতই স্ত্রী সন্তানকে ছেড়ে স্বামীকে চলে যেতে হল পরপারে।
নিহত আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী বুকফাটা আর্তনাদ নিয়ে অভিযোগ করেছেন, এটি দুর্ঘটনা নয়—একটি হত্যা। তার ভাষায়, “এটা মৃত্যু নয়, হত্যা। এটা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের অবহেলা। টাকা বা চাকরি দিয়ে ক্ষতিপূরণ হবে না। অবহেলায় জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে।” তিনি বলেন, “আমার ছেলেটার বয়স ৪ বছর, মেয়ের ৩। ওরা এখন বাবাহীন। এই ক্ষতি কীভাবে পূরণ হবে?” জানা যায়, আবুল কালামের বাসা নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায়। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সেখানে বসবাস করতেন তিনি। এর আগে মালয়েশিয়ায় কর্মরত ছিলেন, তবে বিয়ের পর আর বিদেশে ফেরেননি।
মুহূর্তেই একটা দুর্ঘটনায় জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়া, জীবনের মূল্য দু-ভরি সোনার দাম ৫ লক্ষ টাকাতে নির্ধারিত হয়ে যাওয়া, প্রিয়তম স্বামী হারিয়ে স্ত্রীর বুকফাটা আর্তনাদ, দুটি সন্তানের মায়া ভরা মুখ, হৃদয় স্পর্শ করা মমতাময়ী চেহারা। সকল আয়োজন সকল আর্তনাদ সকল দুঃখ বেদনা সবকিছু শেষ হয়ে অবশেষে দাফন কার্য সম্পন্ন হয়ে গেছে। নিজ জন্মভূমিতেই অবশেষে চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে গেলেন মেট্রো দুর্ঘটনায় নিহত কালাম। মহান সৃষ্টিকর্তা আপনাকে ওপাড়ে ভালো রাখুন, এপারে আপনার রেখে যাওয়া স্ত্রী সন্তানকে মহান পালনকর্া ভালো রাখুন।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর
খোলা কলাম এর সর্বশেষ খবর