
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ৬নং ফতেপুর ইউনিয়নের কিনাই ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য, ফসলি জমি, মসজিদ, বসতবাড়ি এবং নির্মাণাধীন সুইচগেটসহ বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। এই ঘটনায় যেকোনো সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, গত ২৪ সেপ্টেম্বর নারাইনপুর (মাঝর টুল) গ্রামের মো. ইসলাম উদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারীর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। প্রাথমিক অভিযোগের পর প্রতিকার না পাওয়ায় এবার ফতেপুর ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ পাঁচজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং কিনাই ছড়া পানি ব্যবস্থাপনা কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অভিযুক্ত করে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ সুপার, জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী, গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা প্রকৌশলী এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই ঘটনায় এলাকায় বর্তমানে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।
অভিযুক্তরা হলেন ফতেপুর পঞ্চম খণ্ড গ্রামের মৃত আব্দুল হকের ছেলে সমছুল হক, ফতেপুর চতুর্থ খণ্ড গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে ফয়ছল আহমদ, ফতেপুর পঞ্চম খণ্ড গ্রামের মৃত ইস্রাক আলীর ছেলে ইসুব আলী, ফতেপুর চতুর্থ খণ্ড গ্রামের মৃত আহমদ ডিলারের ছেলে ময়না মিয়া, ফতেপুর পঞ্চম খণ্ড গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে রাসেল আহমদ এবং কিনাই ছড়া পানি ব্যবস্থাপনা কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফতেপুর ইউনিয়নের তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম খণ্ডের অধিবাসীরা একটি পাহাড়ি ছড়ার (কিনাই ছড়া নামে পরিচিত) দুই পাশে বসবাস করেন। এই ছড়ার দুই পাশে তাদের বসতবাড়ি ও কৃষি জমি রয়েছে। এই কৃষি জমিগুলোকে তিন ফসলের আওতায় আনার জন্য বি.এ.ডি.সি সেচের মাধ্যমে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে এলজিইডি অধিদপ্তরের অধীনে একটি সুইচগেট নির্মাণাধীন রয়েছে। কিন্তু অবৈধভাবে ছড়া ইজারা দেওয়ার কারণে এই সুইচগেটটি মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। এছাড়াও হরিপুর-সালুটিকর রাস্তায় কিনাই ছড়ার ওপরে নির্মিত সেতুসহ আরও তিনটি সেতু যেকোনো সময় মাটি ভাঙনে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির যোগসাজশে অভিযুক্ত পাঁচজন তাদের বাড়ি সংলগ্ন ঘাটে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন করছেন, যার ফলে ছড়ার পশ্চিম পাশে ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করছে। সমিতির কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, কারণ দুই বছর ধরে সদস্যগণের চাঁদার টাকার হিসাব বা পাশবই প্রদান করা হয়নি এবং অনেক সদস্যই জানেন না কে বা কারা সদস্য আছেন।
সিলেট জেলার উপপরিচালক (উপসচিব), স্থানীয় সরকার সুবর্ণা সরকার এই বিষয়ে বলেন, “বিষয়টি জেনেছি, এ নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার জানান, “পরিবেশের বিষয়ে বর্তমানে কঠোর অবস্থানে আছি। বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত অভিযান ও মামলা দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।”
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন অধিকারী (ইউএনও) বলেন, “এ নিয়ে আমার কাছে পূর্বে একটি অভিযোগ এসেছিলো। আমি তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সরেজমিনে পাঠিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ প্রদান করেছি। উপজেলা প্রশাসন এ নিয়ে জিরো টলারেন্সে আছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, অভিযোগের কপি এখনো তিনি পাননি। বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।
এলাকাবাসী সরকারি স্থাপনা ও তাদের কৃষি সহায়-সম্পদ রক্ষার্থে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসের পর এলাকায় উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর