
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের মতোই ধীর গতিতে চলছে বাংলা নিউজ ডটকমের সাবেক জামালপুর জেলা প্রতিনিধি ও একাত্তর টিভির সাবেক উপজেলা সংবাদদাতা গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া। দুই বছর পার হলেও এ মামলায় কোনো অগ্রগতি নেই বলে অভিযোগ তুলেছেন নিহত সাংবাদিকের পরিবার।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) সাংবাদিক নাদিমের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে সরেজমিনে গেলে তার স্ত্রী মনিরা বেগম ও বাবা অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য আব্দুল করিম অভিযোগ করেন— মামলার প্রকৃত আসামিদের আড়াল করার চেষ্টা চলছে।
তারা সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ সেল বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান মো. খায়রুল আলম রফিক ও তার টিমের কাছে বলেন, “আমার স্বামী হত্যায় সাধুরপাড়া ইউনিয়নের সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল আলম ওরফে বাবু চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ২৭ জন জড়িত থাকলেও চার্জশিটে মাত্র ৯ জনের নাম আনা হয়েছে। এতে মূল খুনিরা আড়ালে থেকে যাচ্ছে। যা আমাদের পরিবারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
মনিরা বেগম আরও বলেন, “আমরা অসহায়। কেউ পাশে নেই। বকশীগঞ্জের সাংবাদিক সমাজ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের সাহসেই আমরা টিকে আছি। আমি আমার স্বামীর হত্যার ন্যায়বিচার চাই।”
সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ সেল বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মো. খায়রুল আলম রফিক বলেন,
“১৯৯২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ৬৯ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডে ন্যায়বিচার না হওয়ায় আজও সাংবাদিকরা খুন হচ্ছেন। গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে— কারণ পূর্বের হত্যাগুলোর বিচার হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “নাদিম হত্যাকাণ্ডটি অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর। তদন্তে গাফিলতি ও নাটকীয়তা চলছে। যেমনভাবে সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত ১২৫ বার পিছিয়েছে, আমরা চাই না নাদিম হত্যায়ও একই কৌশল দেখা যাক। যদি বিলম্ব হয়, সাংবাদিক সমাজ দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলনে যাবে।”
নাদিম হত্যার ঘটনাটি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ ও তদারকির জন্য সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ সেল বাংলাদেশ পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
কমিটির প্রধান সিনিয়র সাংবাদিক ও সেলের সহকারী পরিচালক (আইন) মোহাম্মদ আলী আবির।
এছাড়াও সদস্য হিসেবে রয়েছেন —
মো. আব্দুল মান্নান (সেলের ময়মনসিংহ জেলা শাখার প্রধান, অনুসন্ধান বিভাগ)
জিএম ফাতিউল হাফিজ বাবু (সভাপতি, বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাব)
একজন মানবাধিকার কর্মী
উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সেলের পরিচালক (জেলা ইউনিট প্রধান) রেজাউল করিম রেজা, সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান রুবেল, সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) আবুল কাশেম, সহকারী পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) সেলিম সরকারসহ স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ — মাসুদ উল হাসান, এমদাদুল হক লালন, আল মোজাহিদ বাবু, মনিরুজ্জামান লিমন ও রকিবুল হাসান বিদ্রোহী।
সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ সেল বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ নাদিমের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের খোঁজখবর নেন। দেখা যায়, পরিবারটি চরম আর্থিক সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছে। নাদিম হত্যার পর থেকে তাদের কোনো স্থায়ী আয়ের উৎস নেই।
পরিদর্শন শেষে দলটি বকশীগঞ্জ থানায় গিয়ে ওসি খন্দকার শাকের আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং মামলার অগ্রগতি বিষয়ে কথা বলেন। পরে নাদিমের কবর জিয়ারত ও তার পিতার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাবে যান তারা।
প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ সেল বাংলাদেশের চেয়ারম্যান খায়রুল আলম রফিকসহ উপস্থিত নেতৃবৃন্দকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর