
হবিগঞ্জ জেলাকে মাদকমুক্ত করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন পুলিশ সুপার এএনএম সাজেদুর রহমান। "মাদককে না বলুন" নীতিকে সামনে রেখে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
এর ফলে মাদক ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙে পড়েছে এবং তারা এখন বিকল্প পথে মাদক পাচারের চেষ্টা করছে। বিশেষ করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এবং সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
পুলিশ সুপারের কঠোর নির্দেশনায় গত ১৫ দিনে ১১টি অভিযানে মোট ১২৭ কেজি গাঁজা, ৮০০ কেজি ভারতীয় ফুচকাসহ বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য এবং ১৮ জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকালে চুনারুঘাট থানা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চুনারুঘাট পৌরসভার বান্নিপার্ক রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে ৬ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে। একই দিনে সকাল ১০টায় হবিগঞ্জ ডিবি পুলিশের অভিযানে পুরাতন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চুনারুঘাট চণ্ডি মাজার গেট থেকে ১৫ কেজি গাঁজাসহ আরও দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে, গত ১৫ অক্টোবর হবিগঞ্জ গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ সদর থানার পাইকপাড়া বাইপাস এলাকা থেকে ৩০৮ পিস ইয়াবাসহ একজন ইয়াবা ব্যবসায়ীকে আটক করে। ১৪ অক্টোবর শায়েস্তাগঞ্জ থানা পুলিশ অলি পুর স্কয়ার কোম্পানির সামনে থেকে ৭০ কেজি গাঁজা আটক করে, তবে ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। ১৩ অক্টোবর হবিগঞ্জ গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি বিশেষ দল ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অলি পুর রেল ক্রসিংয়ের শেষ মাথার রাস্তা ডিভাইডারের সামনে থেকে ৮০০ কেজি ভারতীয় ফুচকাসহ ৩ জন চোরাকারবারিকে আটক করে। ১১ অক্টোবর হবিগঞ্জ গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের বিশেষ দল হবিগঞ্জ শহরের আধুনিক স্টেডিয়ামের সামনে থেকে ৮ কেজি গাঁজাসহ একজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে। ১০ অক্টোবর হবিগঞ্জ বাহুবল থানা পুলিশের একটি বিশেষ দল মীরপুর এলাকার রঘুরামপুর থেকে ১২ কেজি মাদকসহ একজনকে আটক করে। ৭ অক্টোবর হবিগঞ্জ গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের বিশেষ দল মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া বাজারের কাঁচাবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪৫ হাজার টাকার জাল নোটসহ দুইজনকে আটক করে।
৩ অক্টোবর হবিগঞ্জ গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের বিশেষ দল হবিগঞ্জ সদর থানা এলাকা থেকে ভারতীয় আমদানি নিষিদ্ধ ১৫ বোতল স্কোপ কফ সিরাপ, ১ কেজি ৫০০ গ্রাম গাঁজাসহ দুইজনকে আটক করে। একই দিনে চুনারুঘাট থানাধীন গোল চত্বর এলাকার শ্যামলী বাস কাউন্টারের সামনে থেকে ৪ কেজি গাঁজাসহ একজনকে আটক করা হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের বিশেষ দল মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭ কেজি গাঁজাসহ ২ জনকে আটক করে। ২৬ সেপ্টেম্বর মাধবপুর থানা পুলিশের বিশেষ দল মাধবপুর থানাধীন মাধবপুর বাসস্ট্যান্ড, মর্ডান বাস কাউন্টারের সামনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ওপর চেকপোস্ট বসিয়ে ভারতীয় তৈরি আমদানি নিষিদ্ধ ১১৫০ পিস ফেসওয়াশ, ৬০০ পিস স্পট ফেসওয়াশ এবং একটি মাইক্রোবাসসহ ২ জন চোরাকারবারিকে আটক করে।
হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার এএনএম সাজেদুর রহমান বলেন, "আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছি। হবিগঞ্জের যুব সমাজকে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষার জন্য পুলিশ দিবারাত্রি কাজ করছে। মাদক নির্মূলের জন্য পুলিশ বিশেষ টিম কাজ করছে। আমরা সার্বক্ষণিক সোর্স নিয়োগ করেছি, যাতে কোনো অবস্থায় মাদক কারবারিরা আমাদের চোখে ফাঁকি দিতে না পারে। সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে টহল জোরদার করা হয়েছে, যাতে ভারতীয় মাদক প্রবেশ করতে না পারে।" তিনি আরও বলেন, "আমরা মাদকের বড় চালান আটককারীদের পুরস্কৃত করছি। আমি জানি মাদক নির্মূল করা কঠিন চ্যালেঞ্জ, তবুও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিগত এক মাসে ১৫/২০টি চালান আটক করেছি। মাদক কারবারিদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। হবিগঞ্জে যতদিন আছি তাদের যমদূত হয়ে কাজ করে যাবো, ইনশাআল্লাহ।"
মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে পুলিশ সুপার আতঙ্কের নাম হলেও সাধারণ জনগণ এবং সচেতন মহল তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে পুলিশ সুপারকে অভিনন্দন জানানো হচ্ছে।
রাজনৈতিক নেতারাও যুব সমাজকে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা করার জন্য তাকে প্রশংসা করছেন।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর