ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও গাজা উপত্যকায় মানবিক সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ত্রাণকর্মীদের ভাষায়, যুদ্ধবিরতি মানুষের কষ্ট কমাতে খুব একটা ভূমিকা রাখেনি—বরং খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির ঘাটতি আরও প্রকট হয়েছে।
ইউরোমেড মনিটরের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকে গাজায় প্রবেশ করেছে প্রায় ৮ হাজার ৫০০ ট্রাক, যেখানে প্রতিদিনের প্রয়োজন ছিল অন্তত ১ হাজার ট্রাক। তার মধ্যে মাত্র ৩৫ শতাংশ উত্তর গাজায় পৌঁছাতে পেরেছে। আন্তর্জাতিক রেডক্রস (ICRC) জানিয়েছে, “এই সহায়তা বিশাল চাহিদার তুলনায় এক ফোঁটা পানির মতোই।”
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কার্যালয় (OCHA) জানিয়েছে, কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজার অনেক রুট সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ছিল, যা সহায়তা বিতরণে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিমান হামলা ও স্থল অভিযান ধ্বংস করে দিয়েছে গাজার বাসস্থান, হাসপাতাল, পানি ও বিদ্যুৎব্যবস্থা। রেসকিউ ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭৫ শতাংশ এলাকা এখনো অনিরাপদ বা সংঘর্ষপ্রবণ অঞ্চল। হাসপাতালগুলোতে জ্বালানি ও ওষুধের সংকট, হাজারো মানুষ আশ্রয় নিচ্ছে ধ্বংসস্তূপের পাশে অস্থায়ী তাঁবুতে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানায়, গাজার প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন একাধিক দিন না খেয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। প্রায় ৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষ চরম খাদ্যসংকটে ভুগছে। চাষযোগ্য জমি ধ্বংস ও সীমান্ত অবরোধের কারণে খাদ্য সরবরাহ পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।
জাতিসংঘের হিসাবে, গাজার ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ অন্তত একবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যুদ্ধবিরতি থাকলেও অনেক এলাকা এখনো “অসুরক্ষিত অঞ্চল” হিসেবে ঘোষিত, ফলে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরতে পারছে না।
সংকট আরও বাড়ছে কারণ যুদ্ধবিরতি অস্থায়ী ও ভঙ্গুর, সীমান্তে সহায়তা প্রবেশে বাধা, অবকাঠামোগত ধ্বংসযজ্ঞ, এবং মানবিক সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। শিশু ও নারীদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও চিকিৎসা নেই।
জাতিসংঘ ও ত্রাণ সংস্থাগুলোর মতে, গাজায় অবাধ ত্রাণপ্রবেশ, নিরাপদ বিতরণব্যবস্থা, এবং মানবিক সংস্থাগুলোর টেকসই উপস্থিতি জরুরি। তারা সতর্ক করে বলেছে, যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, গাজায় দুর্ভিক্ষ ও জনস্বাস্থ্য বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে উঠবে।
সূত্র: আলজাজিরা, রয়টার্স ।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর
সারাবিশ্ব এর সর্বশেষ খবর