যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার তেল খাতের দুই বৃহৎ কোম্পানি রসনেফট (Rosneft) ও লুকঅয়েলের (Lukoil) ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তে রাশিয়ার অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন কৌশল সাজাচ্ছেন—যা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ‘টিকে থাকার যুদ্ধ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানি এবং বৈদেশিক লেনদেন কঠোরভাবে সীমিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নও রাশিয়ার কয়েকটি আর্থিক ও প্রতিরক্ষা কোম্পানির বিরুদ্ধে অনুরূপ ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণার পরপরই বৈশ্বিক তেলবাজারে দাম ব্যারেলপ্রতি ৫ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে।
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, তেল রপ্তানি থেকে দেশটির মোট বাজেটের প্রায় ৪০ শতাংশ রাজস্ব আসে। ফলে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে সরকারি ব্যয় সংকুচিত হবে এবং মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুতিনের প্রতিক্রিয়া ও কৌশল
ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে বলেছে, “ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপ মূলত অর্থনৈতিক যুদ্ধের সমান।” পুতিন প্রশাসন জানিয়েছে, তারা বিকল্প বাজার খোঁজার পাশাপাশি “মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা বাড়ানোর” পদক্ষেপ নেবে। বিশ্লেষকদের মতে, এর ইঙ্গিত মূলত চীন, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের দিকে।
রাশিয়া ইতোমধ্যেই কিছু তেল চালান ভারত ও চীনের দিকে সরিয়ে দিয়েছে। তবে, নতুন নিষেধাজ্ঞার পর চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিগুলো রাশিয়ান তেল কেনা স্থগিত করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এতে রাশিয়ার রপ্তানি বাজারে ঘাটতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধ করতে এখনই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এই নিষেধাজ্ঞা পুতিনের যুদ্ধযন্ত্রকে দুর্বল করবে।” ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার সঙ্গে ‘গঠনমূলক সম্পর্ক’ চায়, তবে যুদ্ধ ও আগ্রাসনের বিনিময়ে নয়।
ইউরোপ ও এশিয়ার প্রতিক্রিয়া
ইউরোপীয় দেশগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেছেন, “রাশিয়াকে চাপের মুখে না ফেললে ইউক্রেনের যুদ্ধ থামানো সম্ভব নয়।”
অন্যদিকে, ভারত ও চীন সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। তারা বলছে, নিষেধাজ্ঞা বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।
বিশ্লেষণ
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি পুতিনকে এক নতুন বাস্তবতায় ঠেলে দিয়েছে—যেখানে তার কৌশল এখন অর্থনৈতিক টিকে থাকা ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা রক্ষা। রাশিয়ার অভ্যন্তরে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও মুদ্রার অবমূল্যায়ন জনঅসন্তোষ বাড়াতে পারে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ইউরোপীয় জ্বালানি নির্ভরতা কমিয়ে নিজেদের ভূরাজনৈতিক প্রভাব পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে।
সূত্র: সিএনএন, রয়টার্স, ওয়াশিংটন পোস্ট, টাইম, এপি নিউজ।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর
সারাবিশ্ব এর সর্বশেষ খবর