যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সমপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রও এখন থেকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় অংশ নেবে। বুধবার (২৯ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে তিনি জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে (পেন্টাগন) নির্দেশ দিয়েছেন ‘অন্যান্য দেশগুলোর মতোই সমানভাবে’ নিউক্লিয়ার অস্ত্র পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করতে। ট্রাম্প তার পোস্টে লেখেন, “অন্যান্য দেশ যখন তাদের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করছে, তখন আমরাও সমপরিমাণে পরীক্ষা শুরু করব। এই প্রক্রিয়া অবিলম্বে শুরু হবে।”
১৯৯২ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পূর্ণ মাত্রার পারমাণবিক বিস্ফোরণ পরীক্ষা চালায়নি। সে সময় থেকে দেশটি কম্পিউটার সিমুলেশন, ক্ষুদ্র আকারের সাবক্রিটিক্যাল পরীক্ষা এবং অস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণ প্রোগ্রামের ওপর নির্ভর করছে। ট্রাম্পের নতুন ঘোষণায় প্রায় ৩৩ বছরের পুরোনো সেই নিষেধাজ্ঞা কার্যত ভেঙে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
ট্রাম্পের এই ঘোষণার সময়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। খুব শিগগিরই দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এই ঘোষণার ফলে বৈঠককে ঘিরে কূটনৈতিক পরিবেশে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ গবেষণা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রাশিয়ার হাতে প্রায় ৫ হাজার ৫০০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৪৪টি।
ঘোষণার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নেভাডা অঙ্গরাজ্যের কংগ্রেস সদস্য ডেমোক্র্যাট ডিনা টাইটাস বলেছেন, তিনি এই পরীক্ষার উদ্যোগ ঠেকাতে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেবেন। তাঁর দাবি, “নিউক্লিয়ার পরীক্ষার পুনরায় সূচনা শুধু বিপজ্জনকই নয়, এটি মানবতা ও পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদি সত্যিই পরীক্ষাগুলো শুরু হয়, তবে এটি আন্তর্জাতিক চুক্তি ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষ করে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে অস্ত্র প্রতিযোগিতা নতুন করে তীব্র হতে পারে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত ‘কমপ্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট ব্যান ট্রিটি’ (CTBT) অনুমোদন করেনি, তবুও দেশটি গত তিন দশক ধরে স্বেচ্ছায় পারমাণবিক বিস্ফোরণ পরীক্ষা থেকে বিরত ছিল। ফলে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত সেই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও শান্তি চুক্তির চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
দক্ষিণ এশিয়ায়ও এই ঘোষণার প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশসহ ছোট দেশগুলোর জন্য এটি কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা নীতিতে নতুন হিসাবের সূচনা করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এমন পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স, এপি নিউজ, পলিটিকো।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর
সারাবিশ্ব এর সর্বশেষ খবর