• ঢাকা
  • ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১৮ মিনিট পূর্বে
মোঃ আনোয়ার হোসেন আকাশ
রাণীশংকৈল প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ৩০ অক্টোবর, ২০২৫, ০৪:২৮ দুপুর

মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় স্ত্রীর শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

স্বামীর দেওয়া আগুনে গুরুতর দগ্ধ হয়ে গত পঁচিশ দিন ধরে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন গৃহবধূ ইসরাত জাহান সাথী (৩৩)।

এই মুহূর্তে তার পাশে কেউ নেই। অভিযোগ উঠেছে, মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় তার স্বামী রুবেল হোসেন (৩৬) স্ত্রীর শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাথীর শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।

সাথীর অভিযোগ, তার স্বামী রুবেল একজন মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী। জানা গেছে, সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের চৌধুরীহাট বন্দিকার্ডা এলাকায় সাথীর জন্ম হয়। দুই বছর বয়সে বাবা মারা গেলে তার মা বেগম তাকে শহরের হাজীপাড়া এলাকার ইমাম উদ্দিন-বিলকিস বানু দম্পতিকে দত্তক দেন। ঠাকুরগাঁও মহিলা কলেজে এইচএসসি অধ্যয়নরত অবস্থায় ২০১২ সালে পালিত মা-বাবা তাকে বিয়ে দেন। ওই সংসারে তার ৯ বছরের একটি ছেলে ও ৪ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। এরই মধ্যে তিনি ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী রুবেল হোসেনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং প্রথম স্বামী-সন্তান রেখে পালিয়ে আসেন।

পরে পরিবারের লোকজন তাকে বুঝিয়ে আগের স্বামীর কাছে পাঠালে পনেরো দিন সংসার করার পর তিনি আবার জন্মদাতা মায়ের কাছে পালিয়ে যান। এরপর রুবেল হোসেনের স্ত্রী-সন্তান থাকা সত্ত্বেও চার বছর প্রেম করে ২০২২ সালের শেষ দিকে সাথী পরিবারকে না জানিয়ে তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা পৌর শহরের নিশ্চিন্তপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় ওঠেন। রুবেলের সঙ্গে তার মা-বাবার কোনো সম্পর্ক নেই। ময়মনসিং থেকে তারা অনেক আগেই ঠাকুরগাঁওয়ে এসেছিলেন।

বিয়ের প্রথম দিকে সংসার ভালো চললেও কিছুদিন পর রুবেল মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। প্রতিদিন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বাড়ি ফেরা, ঝগড়া-বিবাদ, মারধর ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। চলতি মাসের শুরুর দিকে সাথী তার স্বামীর মাদক সেবনে বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রুবেল তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। সাথীর চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

কিন্তু পঁচিশ দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও তার স্বামী বা পালিত মা-বাবা কেউ তাকে দেখতে আসেননি। এমনকি জন্মদাতা মা বেগম একদিন এসে সান্ত্বনা না দিয়ে উল্টো মারা যাওয়ার কথা বলে চলে যান। বর্তমানে সাথী মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দিলেও অর্থের অভাবে তিনি যেতে পারছেন না।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ইসরাত জাহান সাথী বলেন, "আমার মা থেকেও নেই। দুই বছর বয়স থেকেই আমি অন্যের বাড়িতে মানুষ হয়েছি। আমি এতিম, বাবা নেই। যাদের মা-বাবা পরিচয় দিয়ে বড় হয়েছি তারাও আজ আমার এই করুণ দিনে পাশে নেই। প্রেম করে বিয়ে করেছি। ভালোবাসার টানে পরিবারকে উপেক্ষা করে নতুন সংসার গড়েছি। প্রথম কয়েক মাস ভালোই ছিল। কিন্তু তারপরই বাস্তবতা বদলে যায়। স্বামী নেশায় জড়িয়ে পড়েন – মাদক সেবন, অর্থের অভাব, ঝগড়া, গালাগালি – সবই ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। তবুও আমি চুপ ছিলাম। ভাবতাম মানুষটা একদিন বদলে যাবে। সে মানুষজন বাসায় এনে মাদকের ব্যবসা করে। নিজে মাদক খায়। অথচ আমি দিনের পর দিন না খেয়ে থাকি। সে আমাকে হাত-পা বেঁধে পেটায়। খাবার দেয় না। তারপরও সব যন্ত্রণা সহ্য করে সংসার করতে চেয়েছিলাম।"

তিনি আরও বলেন, "একদিন স্বামী মাদক সেবন করছিলেন, আমি তাতে বাধা দেই। এতে সে রাগে ক্ষোভে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমি ভালোবাসায় বিশ্বাস করতাম। এখন ভয় লাগে। আমার স্বামী আগুন দিয়েছে, কিন্তু তার চেয়ে বড় আগুন হচ্ছে এই অবহেলা। কেউ আমার খোঁজ নেয় না। না আমার শ্বশুরবাড়ির কেউ, না আমার নিজের পরিবার। আমি শুধু চাইছিলাম ওটা (স্বামী) মাদক খাওয়া ছাড়ুক। কিন্তু সেদিন আগুন দিয়ে হাসতে লাগলো। প্রতিবেশীরা না এলে হয়তো আজ আমি বাঁচতাম না।"

ইসরাত জাহান সাথী প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করে বলেন, "আমাকে বাঁচান। আমি বাঁচতে চাই। আমি আবার হাঁটতে চাই, কিন্তু ডাক্তার বলেছে উন্নত চিকিৎসা দরকার। সেই টাকা আমার কোথায়? আমার ঘুমাতে খুব ইচ্ছা করতেছে। এখান থেকে আমাকে ইঞ্জেকশন ওষুধ কিছুই দিচ্ছে না। জ্বালাপোড়া করছে স্যালাইন চাচ্ছি সেটাও দিচ্ছে না। চব্বিশ ঘণ্টায় আমার পাঁচ-ছয় মলমের প্রয়োজন, কিন্তু হাসপাতাল থেকে তো কিছুই দিচ্ছে না। শুধু সামান্য দুটো ট্যাবলেট দেয়। আর ডাক্তার আসলে শুধু বলে বাড়ি চলে যাও। আমি যাব কোথায়? আমার জন্মদাতা মা থাকে চৌধুরীহাটে। আর পালিত মা থাকে হাজীপাড়ায়, ওরা ইচ্ছা করলেই লোক পাঠাতে পারে আমার কাছে। কিন্তু তারা এখন বলছে আমাদের কোনো মেয়ে নাই।" তিনি আরও জানান, তাকে চেয়ে চেয়ে খেতে হয়। নিজ হাতে খেতে পারেন না। কেউ খাওয়ায় দিলে খান আর কেউ না দিলে না খেয়ে থাকেন।

সাথীর পাশের বেডে থাকা অন্যান্য রোগীরা বলেন, "মেয়েটা খুবই অসহায়। কেউ আসে না তাকে দেখতে। সে যে খাবার খাবে সেটাও খেতে পারে না। হাত অচল। আমরাই তার মুখে খাবার তুলে দেই। আমরা না থাকলে না খেয়ে পড়ে থাকে। আর ব্যথায় কাতর হয়ে যায়।" তারা আরও বলেন, "মানুষ এতটা কীভাবে নিষ্ঠুর হতে পারে। দেশে কি আইন নেই। এখনো কীভাবে তার স্বামী বাইরে থাকে। পুলিশ তাকে ধরছে না কেন। আর পরিবারেই বা কেমন খোঁজ-খবর নেয় না।"

হাসপাতালের রোমানা নামে এক নার্স বলেন, "সাথী খুব সাহসী মেয়ে। এত কষ্টের মধ্যেও কাঁদে না। কেবল কখনো বলে আমি কি আর বাঁচব? তখন আমাদেরও চোখে পানি আসে।"

এ বিষয়ে সাথীর পালিত মা বিলকিস বানুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "কেন তার সঙ্গে যোগাযোগ করব আমরা? তাকে আমি চব্বিশ বছর ধরে লালন পালন করে মানুষ করলাম। পড়াশোনা করালাম। বিয়ে দিলাম। কিন্তু সে দুটো ছোট ছোট বাচ্চা রেখে পালিয়ে যায়। আবারো বুঝায় শোনায় টাকা খরচ করে আগের স্বামীর কাছে পাঠালাম। পনেরো দিন সংসার করার পর বাচ্চাদের রেখে পালিয়ে যায় তার জন্মদাতা মায়ের কাছে। তার সংসার আটকানোর জন্য আমি তার হাত-পা পর্যন্ত ধরেছি। কিন্তু সে আমাকে বলে- তুমি কে, তুমি কি আমাকে পেটে ধরেছো? এরপর সে রুবেলকে বিয়ে করে। আমি মনে করি তার এই অবস্থার জন্য সে নিজেই দায়ী। আমার মেয়ে নাই তাকে মেয়ের মতো মানুষ করে ভালো ঘরে বিয়ে দিলাম আর সে অন্যের কথা শুনে সুন্দর জীবনটা নষ্ট করে দিল। বাচ্চাদের এতিম করে দিল।"

ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, "দগ্ধ অবস্থায় ওই নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় প্রায় এক মাস আগে। তার শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশের বেশি অংশ পুড়ে গেছে, বিশেষ করে বুক ও হাতের অংশে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি তাকে সুস্থ করে তোলার। তবে তার শারীরিক অবস্থা এখনো নাজুক। যদি জেলা প্রশাসন বা সমাজের বিত্তবান মানুষ সহযোগিতা করেন, তাহলে তাকে দ্রুত ঢাকায় স্থানান্তর করে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে।"

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা লিগাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ মো. মজনু মিয়া বলেন, "নারী নির্যাতনের যে কোনো ঘটনাই রাষ্ট্রের প্রতি এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। সাথীর মতো অসহায় নারীরা যখন ন্যায়বিচারের জন্য পথে পথে ঘুরে বেড়ায়, তখন আমাদের মানবিক ও আইনি দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। যদি ভুক্তভোগী বা তার পরিবার লিখিত আবেদন করেন, আমরা সরকারি খরচে তার জন্য আইনি সহায়তা দিতে প্রস্তুত। লিগাল এইড বোর্ডের মাধ্যমে বিনা খরচে মামলা পরিচালনা, আইনজীবী নিয়োগ, এমনকি প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তাও দেওয়া সম্ভব।"

ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরোয়ারে আলম খান বলেন, "এমন একটি ঘটনা শুনেছি। ভুক্তভোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে থানায় এমন কোনো অভিযোগ কেউ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইসরাত ফারজানা বলেন, "ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও নিন্দনীয়। আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

ভুক্তভোগী সাথীর চিকিৎসা যেন যথাযথভাবে হয়, সেজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তাকে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হবে।"

মুনতাসির/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]