জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে কাস্টমসের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার ৭৮৪ টাকার সম্পদের মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। পাশাপাশি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৫৯ লাখ ১০ হাজার ৪১১ টাকার সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলে রাখার অভিযোগও রয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করেন প্রতিষ্ঠানটির সহকারী পরিচালক সায়েদ আলম। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপপরিচালক সুবেল আহমেদ।
দুর্নীতিতে অভিযুক্তরা হলেন কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কার্যালয়ের সাবেক সহকারী কমিশনার আহসান হাবিব ও তাঁর স্ত্রী আসমা সুলতানা। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার বাসিন্দা আহসান হাবিব ১৯৮০ সালে কাস্টমসের একজন পরিদর্শক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। ২০১২ সালে তিনি সহকারী কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০১৪ সালে তিনি ঢাকা দক্ষিণের কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার হিসেবে অবসরে যান। তিনি চট্টগ্রামেও কর্মরত ছিলেন। ২০১৮ সালে চট্টগ্রামের দুদক কার্যালয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা ও তাঁর স্ত্রীর সম্পদ বিবরণী দাখিল করা হয়।
দুদকের মামলার নথিতে বলা হয়, ২০১৮ সালের ১২ নভেম্বর কমিশনের আদেশে আহসান হাবিবকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরের মাসে, ১০ ডিসেম্বর, তিনি সম্পদ বিবরণী জমা দেন। তাতে তিনি ৯ লাখ ২৯ হাজার ৬১২ টাকার স্থাবর এবং ৫০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য দেন।
কিন্তু দুদকের যাচাইয়ে দেখা যায়, আহসান হাবিবের নামে ও দখলে মোট ১ কোটি ৪৯ লাখ ৮৯ হাজার ৩৯৬ টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক জমা, নগদ অর্থসহ ১ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার ৭৮৪ টাকার সম্পদের তথ্য তিনি গোপন করেছেন।
তদন্তে আরও জানা যায়, সম্পদ বিবরণী দাখিলের পর তার নামে ১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র, সোনালী ব্যাংকে ৩৩ লাখ টাকার এফডিআর, ৫ লাখ ৭২ হাজার ৫৯৭ টাকার মেডিকেয়ার ডিপোজিট স্কিম এবং তার মেয়ের নামে ৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র পাওয়া যায়। দুদকের হিসাবে আহসান হাবিবের বৈধ আয়ের উৎসে পাওয়া গেছে ৯০ লাখ ৭৮ হাজার ৯৮৫ টাকা। সেই হিসাবে তার ৫৯ লাখ টাকার বেশি সম্পদের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে আসমা সুলতানার বিরুদ্ধে ৩২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৬৬ লাখ ২৪ হাজার ২৫০ টাকার সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসমা সুলতানা তাঁর নিজের নামে ২০ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকার স্থাবর সম্পদ থাকার কথা উল্লেখ করলেও কোনো অস্থাবর সম্পদ নেই বলে সম্পদ বিবরণীতে ঘোষণা দেন। তিনি নিজেকে ব্যবসায়ী উল্লেখ করলেও দুদকের অনুসন্ধানে তাঁর ব্যবসার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
দুদক চট্টগ্রামের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, একটি মামলায় কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কার্যালয়ের সাবেক সহকারী কমিশনারকে আসামি করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদক আইনের একই ধারায় আরেকটি মামলা হয়েছে সাবেক ওই কর্মকর্তার স্ত্রী আসমা সুলতানার বিরুদ্ধে। ওই মামলায় সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। অর্থাৎ অভিযুক্ত কাস্টমস কর্মকর্তা চাকরিরত অবস্থায় অসাধু উপায়ে অর্জিত টাকায় তাঁর স্ত্রীর নামে সম্পদ অর্জন ও তা ভোগদখলে রাখতে সহযোগিতা করেছেন।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর