নিজেকে ফিট রাখতে কে না চায়। কিন্তু পেটের মেদ কমানো সবচেয়ে কঠিন কাজ বলে মনে হয় আজকাল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিশ্রম, ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ এবং দামি পণ্য ব্যবহারের পরেও, কখনো কখনো ফলাফল আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয় না।
মূলত, ওজন কমানোর জন্য শুধু ক্যালরি কমানোই যথেষ্ট নয়; বিপাক ও হজমের ভারসাম্য বজায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে আদা এমন একটি ঘরোয়া প্রতিকার, যা আপনার রান্নাঘরে সর্বদা উপস্থিত থাকে। আপনার চায়ের স্বাদ বাড়ায়—এমন একই আদা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য একটি প্রাকৃতিক ওষুধের চেয়ে কম নয়।
বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, আদার পুষ্টি উপাদান শরীরের বিপাক ত্বরান্বিত করে, চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। ব্রিটিশ স্বাস্থ্য ওয়েবসাইট মেডিক্যাল নিউজ টুডে-এর তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালে ২৭টি গবেষণার পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে আদা খাওয়া ওজন কমাতে কার্যকর হতে পারে।
যদিও গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে আরো গভীর গবেষণা প্রয়োজন, প্রাথমিক ফলাফল আশাব্যঞ্জক।
আপনি যদি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার সঙ্গে আপনার রুটিনে আদা অন্তর্ভুক্ত করেন, তাহলে এটি আপনার ওজন কমানোর যাত্রায় একটি গেম চেঞ্জার হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। এমনটাই বলছেন পুষ্টিবিদরা।
আদার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি আপনার বিপাক বৃদ্ধি করে।
জিঞ্জেরল ও শোগাওলের মতো যৌগগুলো শরীরে থার্মোজেনেসিস প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে, যা শরীরকে দ্রুত ক্যালরি ও চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে। যখন বিপাক সঠিকভাবে কাজ করে, তখন শরীরে চর্বি জমা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
আদার প্রাকৃতিক যৌগগুলো ক্ষুধা দমনকারী হিসেবে কাজ করে। এটি আপনাকে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা অনুভূতি বজায় রাখতে সাহায্য করে, ঘন ঘন পেট ভরা খাবারের আকাঙ্ক্ষা রোধ করে। অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চললে আপনার ক্যালরি গ্রহণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে হ্রাস পাবে, যার ফলে ওজন হ্রাস পাবে।
রক্তে শর্করার মাত্রা ওঠানামা করলে চর্বি পোড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে। আদা শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা উন্নত করে, চিনি আরো সহজে প্রক্রিয়াজাত করা যায় এবং অতিরিক্ত গ্লুকোজ চর্বি হিসেবে জমা হতে বাধা দেয়। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
আদা হজমের জন্য একটি চমৎকার প্রাকৃতিক প্রতিকার। এটি পাকস্থলির এনজাইমগুলোকে সক্রিয় করে, যা খাবার সঠিকভাবে হজম করতে সাহায্য করে এবং গ্যাস ও পেট ফাঁপার মতো সমস্যা কমায়। যখন পাচনতন্ত্র সুস্থ থাকে, তখন শরীরে চর্বি জমা হয় না, যার ফলে ওজন কমানো সহজ হয়।
ওজন কমানোর জন্য আদা থেকে উপকার পেতে হলে, এটি সঠিকভাবে খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে সহজ উপায় হলো আদা ব্যবহার করা। এক টুকরো আদা নিন এবং দুই কাপ পানিতে ফুটিয়ে নিন। পানি অর্ধেক হয়ে গেলে, এটি ছেঁকে নিন এবং খালি পেটে পান করুন। যদি ইচ্ছা হয়, তবে এর স্বাদ বাড়াতে এবং এর ডিটক্সিফাইং প্রভাব দ্বিগুণ করতে সামান্য লেবুর রস ও মধু যোগ করুন।
গ্রিন টি, স্যুপ, অথবা সকালের স্মুদিতেও আদা যোগ করতে পারেন। মনে রাখবেন, বেশি পরিমাণে আদা খেলে এসিডিটি বা বুকজ্বালা হতে পারে। তাই দিনে দুই বারের বেশি আদা গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
আদার রসের গুণ সর্দি, কাশি ও গলা ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়, শরীরের প্রদাহ ও ব্যথা কমায়, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ করে বজায় রাখে হৃদযন্ত্রের সুস্থতা।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর