বর্তমানে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এবং এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বেশ উদ্বিগ্ন থাকেন। ডায়াবেটিস দুটি ধরনে ভাগ করা যায়: টাইপ ১ এবং টাইপ ২। এই দুই ধরনের ডায়াবেটিসের মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে, তবে উভয় ক্ষেত্রেই শরীরে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দেয়।
ডায়াবেটিস আক্রান্তদের জন্য এটি জানা গুরুত্বপূর্ণ যে, টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস আলাদা। এর কারণ, চিকিৎসা এবং প্রতিক্রিয়া দুই ধরনের ডায়াবেটিসের জন্য ভিন্ন। তবে, প্রশ্ন থাকে—কোন ধরনটি বেশি ক্ষতিকর? এই বিষয়ে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছেন ডায়েটিশিয়ান কণিকা মালহোত্রা। চলুন, বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
টাইপ ১ ডায়াবেটিস:
টাইপ ১ ডায়াবেটিস সাধারণত শৈশব বা কৈশোরে শুরু হয়। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন তৈরি করা কোষগুলো ধ্বংস করে ফেলে, যার ফলে ইনসুলিনের অভাব ঘটে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ দ্রুত বেড়ে যায়। ডায়েটিশিয়ান কণিকা মালহোত্রা জানান, টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতিদিন ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়, কারণ তাদের শরীর আর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। এই ধরনের ডায়াবেটিসে হঠাৎ করে বিপজ্জনক অবস্থায় পরিণত হওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা "ডায়াবেটিস কিটোঅ্যাসিডোসিস" নামক অবস্থায় চলে যেতে পারে। চিকিৎসা পাওয়া না গেলে এটি বিপদজনক হতে পারে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস:
টাইপ ২ ডায়াবেটিস সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে, তবে সঠিকভাবে তা ব্যবহার করতে পারে না। এটি "ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স" নামক অবস্থার কারণ হয়, যা সাধারণত অতিরিক্ত ওজন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে ঘটে। ডায়েটিশিয়ান কণিকা মালহোত্রা বলেন, টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং সঠিকভাবে ওষুধ গ্রহণ জরুরি।
ইনসুলিনের অভাবে পরিস্থিতি জটিল হওয়ার ঝুঁকি:
বিশেষজ্ঞদের মতে, টাইপ ১ ডায়াবেটিস দ্রুত ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, কারণ এতে ইনসুলিনের অভাবে পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হতে পারে। তবে টাইপ ২ ডায়াবেটিস ধীরে ধীরে শরীরের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করে, যেমন হার্টের রোগ, কিডনি বিকল হওয়া, বা দৃষ্টিশক্তি হারানো। অর্থাৎ, টাইপ ১ ডায়াবেটিসে তাৎক্ষণিক ঝুঁকি বেশি থাকে, তবে টাইপ ২ ডায়াবেটিস দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হতে পারে, যদি এটি অবহেলিত হয়।
তবে, উভয় ধরনের ডায়াবেটিসেই নিয়মিত যত্ন নিলে ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন—প্রতিদিন রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা, স্বাস্থ্যকর ও কম চর্বি ও চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণ, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, এবং ধূমপান বা মদ্যপান পরিহার করা। ডায়েটিশিয়ান কণিকা মালহোত্রা আরও বলেন, নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং রক্ত পরীক্ষা করিয়ে প্রাথমিকভাবে সমস্যা শনাক্ত করলে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর