আমরা সবাই মনে করি, সকালে ও রাতে দাঁত ব্রাশ করলেই দাঁতের যত্ন ঠিক থাকে। কিন্তু দন্ত বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা—অনেক সময় দিনে একবার সঠিকভাবে ব্রাশ করা, তাড়াহুড়ো করে দুইবার ব্রাশ করার চেয়েও ভালো।
ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহামের ডেন্টিস্ট্রি স্কুলের ডা. প্রভীন শর্মা বলেন, যুক্তরাজ্যের অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময়ে মাড়ির রোগে ভোগেন। এর প্রাথমিক লক্ষণ হলো মাড়ি থেকে রক্ত পড়া।
তিনি আরও বলেন, যদি মাড়ি ফুলে যায় বা রক্ত পড়ে, তাহলে বুঝতে হবে আপনি সঠিকভাবে ব্রাশ করছেন না। নিয়মিত দাঁতের ডাক্তার দেখানোর পাশাপাশি, ডা. শর্মা ও বিবিসির ‘হোয়াটস আপ ডকস’ পডকাস্টের সঞ্চালক ডা. জ্যান্ড ও ডা. ক্রিস ভ্যান তুলেকেন জানিয়েছেন, এমন চারটি সাধারণ ভুল রয়েছে যা আমরা অনেকেই করি—কিন্তু এগুলো ঠিক করলে দাঁতের স্বাস্থ্য অনেক ভালো রাখা সম্ভব।
তাড়াহুড়ো করে দুইবারের চেয়ে একবার সঠিকভাবে ব্রাশ করা ভালো
এনএইচএস পরামর্শ দেয়—দাঁতের যত্নে অন্যতম নিয়ম হলো দিনে দুইবার ব্রাশ করা। কিন্তু দন্ত বিশেষজ্ঞ ডা. শর্মা বলছেন, কয়বার ব্রাশ করলেন তার চেয়ে সঠিকভাবে ব্রাশ করাটাই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, সময় থাকলে অবশ্যই দিনে দুইবার ভালোভাবে ব্রাশ করুন। কিন্তু তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো একবার ভালোভাবে এবং একবার দ্রুত দুই মিনিটের জন্য ব্রাশ করা। যদি দিনে একবারই সঠিকভাবে ব্রাশ করার সময় পান, তাহলে সেটা রাতে ঘুমানোর আগে করার পরামর্শ দেন তিনি।
অনেকেই দাঁতের মাঝের সরু জায়গাগুলো সঠিকভাবে পরিস্কার করতে পছন্দ করেন না। কিন্তু ডা. শর্মা বলেন, ইন্টারডেন্টাল ব্রাশ ব্যবহার করলে এটি অনেক সহজ এবং ব্যথাহীন হয়।
ব্রাশ করার পদ্ধতি নিয়ে তিনি জানান, প্রতিটি দাঁতের বাইরের, কামড়ানোর ও ভেতরের দিক—এই তিন দিকই সমানভাবে পরিষ্কার করতে হবে। ছোট ছোট বৃত্তাকার গতিতে হালকা চাপে ব্রাশ করতে হবে। বিশেষ করে দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থানে যত্ন নিতে হবে, কারণ সেখানেই মাড়ির রোগের ঝুঁকি বেশি।
এদিকে, ডা. জ্যান্ড পরামর্শ দেন, ব্রাশের ব্রিসল বা আঁশের স্পর্শে মনোযোগ দিন, একাগ্রভাবে দাঁত ব্রাশ করুন—ফোন স্ক্রল করতে করতে নয়।
নাশতার আগে ব্রাশ করুন
অনেকেই নাশতা করার পর দাঁত ব্রাশ করেন, কিন্তু এতে দাঁতের এনামেল বা বাইরের স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেজন্য ডা. শর্মা বলেন, আদর্শভাবে নাশতার আগে ব্রাশ করা উচিত। বিশেষ করে কোনো অ্যাসিডিক খাবার খাওয়ার পরপরই ব্রাশ করা ঠিক নয়।
তিনি আরও বলেন, যদি নাশতার পর ব্রাশ করতেই চান, তাহলে খাওয়ার পর অন্তত আধা ঘণ্টা বিরতি দিতে হবে।
এর কারণ হলো, খাবার ও পানীয় বিশেষ করে ফলের রস বা কফির মতো অ্যাসিডযুক্ত জিনিস—দাঁতের এনামেল নরম করে ফেলে। এর ঠিক পরেই ব্রাশ করলে এনামেল ঘষে ক্ষয় হয়ে যেতে পারে।
ডা. ক্রিস পরামর্শ দেন, নাশতার পর সঙ্গে সঙ্গে ব্রাশ না করে আগে শুধু পানি দিয়ে মুখ কুলি করে নিন। এতে মুখের অ্যাসিড কিছুটা ধুয়ে যাবে। তারপর অন্তত ৩০ মিনিট পর ব্রাশ করুন।
ব্রাশ করার পর মুখে পানি দিয়ে কুলি করবেন না
অনেকে ব্রাশ শেষ করে মুখে পানি দিয়ে কুলি করেন বা গার্গল করেন। কিন্তু দন্ত বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভ্যাস দাঁতের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।কিন্তু ডা. শর্মা বলেন, ব্রাশের পর শুধু পেস্ট ফেলে দিন, কিন্তু মুখে পানি দিয়ে কুলি করবেন না। কারণ পানি দিয়ে কুলি করলে টুথপেস্টে থাকা ফ্লোরাইড ধুয়ে যায়। ফ্লোরাইডের পাতলা স্তর দাঁতের ওপর থেকে গেলে দাঁতকে আরও দীর্ঘ সময় সুরক্ষা দেয়—বিশেষ করে ক্যাভিটি থেকে।
তাই ব্রাশ শেষে শুধু পেস্টের অতিরিক্ত অংশ থুতু ফেলে দিন, কিন্তু পানি দিয়ে মুখ না ধুয়ে কিছুক্ষণ ফ্লোরাইড দাঁতে থাকতে দিন। যদি মুখ ধোয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে পানি নয় বরং মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন।
দামী টুথপেস্ট ভালো হবে এমন ধারণা ভুল
দোকানের বিভিন্ন ব্রান্ডের সাজানো টুথপেস্ট দেখে অনেকেই মনে করেন দামি টুথপেস্ট দাঁতকে বেশি সুস্থ রাখে। কিন্তু ডা. শর্মা বলেন, টুথপেস্টের ব্র্যান্ডে তেমন বড় পার্থক্য নেই, যতক্ষণ তাতে ফ্লোরাইড থাকে।
তিনি আরও বলেন, আমি সাধারণত সস্তা বা অফারে থাকা পেস্টই কিনি। কারণ ফ্লোরাইডই প্রধান—এটি দাঁতের এনামেলকে রক্ষা করে এবং ক্ষয় রোধ করে।
তবে, যদি কারও মাড়ি সংবেদনশীল বা বিশেষ সমস্যা থাকে, তাহলে দাঁতের ডাক্তার নির্দিষ্ট ধরনের টুথপেস্ট ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর