পরকীয়া, নির্যাতন ও যৌতুক দাবির অভিযোগ তুলে নড়াইলের কালিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.হাসানুল কবিরের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী মোছা. সাদিয়া কানিজ সিদ্দিকা বৃষ্টি বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেছেন। তবে পুলিশ কর্মকর্তার দাবি তার স্ত্রীর সকল অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
গতকাল রবিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে আমলী আদালত কালিয়ায় মামলাটি দায়ের করেন। আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মারুফ হাসান মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। একই সাথে ২০২৬ সালের (১ জানুয়ারি) তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
অভিযুক্ত হাসানুল কবির কালিয়া থানার পরিদর্শক তদন্ত হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানার রায়নগর গ্রামের কাশেম আলীর ছেলে। তার স্ত্রী মোছা. সাদিয়া কানিজ সিদ্দিকা বৃষ্টি জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানার আক্কেলপুর পুরাতন বাজার এলাকার মো.সিদ্দিকুর রহমান মোন্ডলের মেয়ে।
বাদী মামলার এজহারে উল্লেখ করেন, গত (৬ এপ্রিল) ২০০৮ সালে মোছা. সাদিয়া কানিজ সিদ্দিকা বৃষ্টি মো. হাসানুল কবিরের বিবাহ হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে ফারহাত তাবাচ্ছুম হিয়া (১৪) এবং শবনম তাবাচ্ছুম নিহা (৭) নামে দু'টি সন্তান রয়েছে। আসামী হাসানুল প্রেষণে র্যাবে বদলী হওয়ায় তার স্ত্রী ও সন্তানদের শশুর বাড়িতে রাখেন। এর কিছুদিন পর বাদী জানতে পারেন যে তার স্বামী হাসানুল কবির পর নারীতে আকৃষ্ট। পরে বাদী জানতে পারেন তার স্বামী হাসানুল জেসমিন ইসলাম জেমী নামে এক নারীর সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়েছেন।
বাদী এজহারে আরো উল্লেখ করেন, তাকে ভাল হতে বল্লে আসামি হাসানুল তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। তবে তিনি সন্তানদের কথা চিন্তা করে সংসার করছিলেন। প্রায় ৬ মাস পূর্বে আসামি হাসানুল প্রাইভেটকার কেনার জন্য বাদীকে তার বাবার বাড়ি থেকে ২৫ লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলেন। তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন। ইতিমধ্যে হাসানুল নড়াইল জেলার কালিয়া বদলী হওয়া বাদী তার সাথে কালিয়ায় এসে সংসার করার কথা বল্লে তিনি ২৫ লাখ টাকা না দিলে সংসার করবেন না বলে জানান। চলতি বছরে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে কালিয়া থানায় যোগদানের পর বৃষ্টি তার কন্যাদ্বয়কে নিয়ে বাবার বাড়ি থেকে কালিয়াতে চলে আসেন ২৭ সেপ্টেম্বর। সেদিন ও যৌতুকের দাবিতে মারধর করে পৌরসভার গেস্ট হাউজে বৃষ্টি ও তার পরিবারকে রেখে যান পুলিশ কর্মকর্তা হাসান। পরের মাসের ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় ওই গেস্ট হাউজে যৌতুকের দাবিতে তার স্ত্রীকে আবারও মারধর করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এসকল অভিযোগে পুলিশ কর্মকর্তা হাসানকে অভিযুক্ত করে থানায় প্রতিকার না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন বৃষ্টি বলে নালিশি দরখাস্তে দাবি করেন।
আজ সোমবার দুপুরে মুঠোফোনে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী মোছা. সাদিয়া কানিজ সিদ্দিকা বৃষ্টি বলেন,‘স্বামীর সম্মান আর সন্তানদের কথা ভেবে সব নির্যাতন আমি মুখ বুজে সহ্য করেছি। গত এক বছর ধরে সন্তানদের কোনো ভরনপোষণ দেয় না সে। তবুও আমি সংসার করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু অবশেষে কোনো পথ না পেয়ে ন্যায় বিচার পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আমি তালাকের কাগজ পাইনাই।,
এসকল অভিযোগ অস্বীকার করে কালিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাসানুল কবির আজ সোমবার দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, ‘১০ লাখ টাকার এফডিআর আমার সাবেক স্ত্রী সাদিয়া কানিজ সিদ্দিকা বৃষ্টির নামে দেওয়া হয়। আমার সাবেক স্ত্রী ও তার পরিবার আমাকে মানসিক ভাবে বøাকমেইল করে আমার থেকে বসতভিটা, বাড়ি, ফসলি জমি, সোনা, নগত টাকাসহ প্রায় বর্তমান বাজার মূল্যের প্রায় দুই কোটি টাকার সম্পত্তি লিখে নিয়েছে। গত মাসের ২২ তারিখ ডাকযোগে সাদিয়া কানিজ সিদ্দিকা বৃষ্টিকে তালাকের কাগজ পাঠিয়েছি। পরকীয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর