দলীয় মনোনয়ন পেয়ে প্রথমবারের মতো নিজ এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ফেনীর দাগনভূঞা পৌর শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এদিন সিলোনিয়া বাজারে পথসভা শেষে মিন্টুর গাড়িবহর দাগনভূঞা বাজার অতিক্রম করার সময় তার গাড়ি বহরে হামলা ও বালুর ট্রাক দিয়ে সড়ক অবরোধ করেন দলীয় প্রতিপক্ষের লোকজন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সিলোনিয়া বাজারে পথসভা শেষে মিন্টুর গাড়িবহর দাগনভূঞা বাজার অতিক্রম করার সময় তার সমর্থকদের বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে জিরো পয়েন্টে বালুবোঝাই একাধিক ট্রাক দাঁড় করিয়ে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে জেলা ছাত্রদলের বহিষ্কৃত নেতা কাজী জামশেদুর রহমান ফটিকের অনুসারীরা। একপর্যায়ে সেখানে মিন্টু ও ফটিকের অনুসারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সড়কে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক করলে মিন্টুর গাড়িবহর দাগনভূঞা বাজার অতিক্রম করে তুলাতুলি বাজারের দিকে যায়।
দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেন বলেন, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো নেতা যখন জেলা বা উপজেলায় আসেন তখন জেলার নেতারা সেখানে উপস্থিত থাকেন। দুর্ভাগ্যের বিষয়, দলের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনী এলাকায় আসলেও জেলা বিএনপির নেতারা এখানে আসেননি। এতে মনে হচ্ছে তাদের পরিকল্পনায় এসব ঘটনা ঘটছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি জামশেদুর রহমান ফটিক বলেন, আবদুল আউয়াল মিন্টুর করা একটি মামলায় আমিসহ ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সাইফুর রহমান রতন ও দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সম্পাদক আবুল হাসেম বাহাদুর কারাগার থেকে আজই জামিনে বের হয়েছে। আমাদের নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা দাগনভূঞায় একটি সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল। এ অনুষ্ঠানস্থলের পাশ দিয়ে যাওয়ার পথে আবদুল আউয়াল মিন্টুর গাড়িবহর থেকে বিনা উস্কানিতে আমাদের এক কর্মীর ওপর হামলা করলে দুপক্ষের মধ্যে ঝামেলা তৈরি হয়। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত পাঁচজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, দলের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতার সঙ্গে আজকে যা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো না। এটি মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। এ বিষয়টি ইতোমধ্যে বিএনপির সর্বোচ্চ মহলে জানানো হয়েছে, জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে দাগনভূঞা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওয়াহিদ পারভেজ বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সড়ক থেকে ট্রাকগুলো সরিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক করে, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ করেননি।
গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ফেনী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলালের একক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সোনাগাজী এবং দাগনভূঞা উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তারপর থেকেই এ কমিটি বাতিলের দাবিতে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এর জের ধরে দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে বছর ধরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ভাই ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেন এবং বহিষ্কৃত জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাজী জামশেদুর রহমান ফটিকসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। এ নিয়ে একাধিকবার নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
মাসুম/সাএ
সর্বশেষ খবর