বরগুনার মানুষের কাছে ৩ডিসেম্বর শুধু একটি তারিখ নয় এটি অস্ত্রহীন বিদ্রোহ, সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক। এই দিনের বীরদের প্রতি বরগুনাবাসী চিরঋণী।
১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদারদের কবল থেকে মুক্ত হয় পুরো বরগুনা। বরগুনার মুক্তিকামী তরুণেরা হাতে নেন রাইফেল, বন্দুক ও দেশীয় অস্ত্র। শুরু হয় মুক্তির প্রস্তুতি। কিন্তু অস্ত্রের ঘাটতি এবং পাকবাহিনীর নির্মম আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের বরগুনা শহর ছাড়তে বাধ্য হতে হয়। কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই দখল হয়ে যায় বরগুনা।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বরগুনার বিভিন্ন এলাকায় পাকবাহিনী চালায় অমানবিক নির্যাতন, নারী নিপীড়ন ও নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড। ১৯৭১ সালের ২৯ ও ৩০ মে বরগুনা জেলখানায় ৭৬ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়—যা আজও এক ভয়াবহ স্মৃতি।
সময়ের ব্যবধানে মুক্তিযোদ্ধারা পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করে সংগঠিত হন। নবম সেক্টরের বুকাবুনিয়া সাব-সেক্টরের নির্দেশে ২ ডিসেম্বর রাতে বদনীখালী বাজারে জড়ো হন মুক্তিযোদ্ধারা। রাত ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সত্তার খানের নেতৃত্বে মাত্র ২১জন মুক্তিযোদ্ধা নৌকায় করে পৌঁছে যান খাকদোন নদীর পোটকাখালীতে। তাদের মধ্যে ১০ জন ছিলেন বরগুনার, বাকী ১১ জন ঝালকাঠির। কৌশলগতভাবে তারা শহরকে ভাগ করে নেন কয়েকটি অঞ্চলে—কারাগার, ওয়াবদা কলোনি, জেলা স্কুল, সদর থানা, ওয়্যারলেস স্টেশন এবং এসডিওর বাসভবন।
ফজরের আজান ছিল যুদ্ধের সংকেত। আজান শুরু হতেই ছয়টি স্থানে একযোগে গুলি ছুড়ে মুক্তিযোদ্ধারা সৃষ্টি করেন তীব্র আতঙ্ক। অস্ত্র কম ছিল, কিন্তু সাহস ছিল অদম্য।
এরপর তারা অগ্রসর হন জেলখানার দিকে। আবদুস সত্তার খান ও তার সঙ্গীরা পুলিশ ও রাজাকারদের আত্মসমর্পণ করিয়ে এসডিও অফিসে নিয়ে আসেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা গিয়ে আত্মসমর্পণ করান দেশপ্রেমিক তৎকালীন এসডিও আনোয়ার হোসেনকেও। দুপুর ১২টার দিকে প্রশাসনিক দায়িত্ব তাঁর হাতে বুঝিয়ে দেন মুক্তিযোদ্ধারা। তারপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা ফিরে যান বুকাবুনিয়া সাব-সেক্টরে।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর