নবীগঞ্জ ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মধ্যেবর্তী সীমান্তে কেশবচর গ্রামের মধ্যে আহলে হাদিসের একটি মসজিদ নির্মান নিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। আহলে হাদিসের লোকজনকে আল ইসলাহর লোকজন এলাকায় অবাঞ্চিত ঘোষনা করেছে এবং তাদের মসজিদে সিলগালা করা হয়েছে। এনিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। দ্রুত সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
জানাযায়, কেশবচর গ্রামের লন্ডন প্রবাসী জবরুল মিয়া দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ৩কেদার জমির উপর সালাম ইসলাম এডুকেশন সেন্টার নামীয় একটি ব্যক্তিগত নামীয় মসজিদ ও মাদ্রসা তৈরী করার জন্য গতকাল শনিবার বাদ উদ্বোধন করার কথা ছিল। এটা ছিল আহলে হাদিস ওরফে লা-মাজহাবি মসজিদ ও মাদ্রাসা। তাই এলাকায় ফুলতলী সাহেবের ভক্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। গতকাল তারা ঐ কাজে বাঁধা দেন। ফুলতলী সাহেব কিবলার ভক্ত বৃন্দ গতকাল ঐ উদ্বোধন কাজ ভুন্ডল করে দেন।
এসময় তারা নতুন নির্মিত মসজিদের তালা লাগিয়ে দিলে বিভিন্ন জায়গা থেকে আহলে হাদিসেরর লোকজন এসে আবার উদ্বোধন কাজ ও তালা খোলার চেষ্টা করলে ফুলতলী সাহেবের সংগঠন আল ইসলাহর লোকজন তাদের ধাওয়া করলে আহলে হাদিসের লোকজন ভূ-দৌড় দিয়ে গাড়ি যোগে পালিয়ে যায়। এই মসজিদের কাজ নিয়ে মৌলভীবাজার সদর ও নবীগঞ্জ উপজেলার ১০/১৫টি গ্রামের মানুষের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ ঘটনায় দুই উপজেলার মানুষের মধ্যে তিব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ঘটনার সময়ে খবর পেয়ে পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী সহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা ঐ এলাকায় টহল জোরদার করেন ও পরিস্থিতি সামাল দেন। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঐ প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেয়া হয়। এর মধ্যে আহলে হাদিসের কিছু লোক গাড়ি বহরে সেখানে গিয়ে হাজির হয়ে। এসময় আগত আহলে হাদিসের লোকজন প্রশাসনের সামনে নানান হুংকার দিয়ে জোরপূর্বক তালা খোলার চেষ্টা করলে । উপস্থিত জনতা ও প্রশাসন তাদেরকে রুখে দেয়।
স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়,কেশবচর গ্রামের লন্ডন প্রবাসী জবরুল মিয়ার একটি মসজিদ নির্মানকে কেন্দ্র করে এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে দুটি ধর্মীয় মতাদর্শের অনুসারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। বিশেষত মসজিদের নামকরণ,ইমাম নিয়োগ ও ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের ভিন্নতা,নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে পূর্ব থেকেই মতবিরোধ ছিল।
নতুন মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই দুই দলের মধ্যে উত্তেজনা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তবে শনিবার উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে যায়।
কেশবচর গ্রামের বাসিন্দাদের মুহিদ মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায় বেশ কিছুদিন ধরে এ এলাকায় একাধিকবার ধর্মীয় মতবিরোধ থেকে ছোটখাটো বিবাদ ও বাকবিত-ার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে, আহলে হাদিসদের আলাদা জুমার জামায়াত পরিচালনা,এবং সুন্নিপন্থিদের তার বিরোধিতা সহ দু’পক্ষের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়।
গ্রামের এক প্রবীণ ব্যক্তি মতিন মিয়া বলেন,“এটা হঠাৎ তৈরি হওয়া সমস্যা নয়। আগেও দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, তবে এবার উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি বেশি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।”
এব্যাপারে মৌলভীবাজার মডেল থানার নিয়ন্ত্রণাধীন শেরপুর পুলিশ ফাঁড়ির এস আই শিপু কুমার দাস বলেন “যে কোনো ধরনের ধর্মীয় সংঘাত ঠেকাতে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। কাউকে আইন হাতে তুলে নিতে দেওয়া হবে না।” এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত গ্রামে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সংঘাতের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এবং নিয়মিত টহল পরিচালনা করা হচ্ছে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর