সার সংকটসহ নানা প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে বগুড়ার শেরপুরে আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা। কার্তিকের হিমেল হাওয়া আর কুয়াশা ভেদ করে কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে চলছে আলু বীজ রোপণের কাজ।
বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন কেবলই কর্মব্যস্ততার চিত্র। উপজেলার এক প্রান্তে যখন বীজ রোপণের ধুম, অন্য প্রান্তে তখন আগাম জাতের আলুর পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গ্রামের পর গ্রাম, একরের পর একর জমিতে আলু রোপণ চলছে। এই কর্মযজ্ঞকে ঘিরে কদর বেড়েছে মৌসুমি কৃষি শ্রমিকদের। তবে নারী ও পুরুষ শ্রমিকের মজুরিতে রয়েছে তারতম্য। প্রতিদিন একজন পুরুষ শ্রমিক ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং নারী শ্রমিক ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা মজুরিতে কাজ করছেন।
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চাষাবাদ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। তবে মাঠ পর্যায়ের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা; বাস্তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি জমিতে আলু আবাদ হচ্ছে। গত বছর আলুর দাম ভালো না পাওয়ায় অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, এবার লাভের আশায় বুক বেঁধে দ্বিগুণ উৎসাহে মাঠে নেমেছেন কৃষকরা।
কৃষকদের কথা: খরচ বনাম লাভের হিসাব কুসুম্বী ইউনিয়নের ক্ষিকিন্দা গ্রামের কৃষক আশরাফ হোসেন বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় আলুতে ঝুঁকি থাকলেও লাভ বেশি। এবার আমি ৪ একর জমিতে আলু চাষ করছি। এক একর জমিতে বীজ ক্রয়, রোপণ, সার, সেচ ও শ্রমিকসহ মোট খরচ হয় ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আবহাওয়া ভালো থাকলে খরচ বাদে একর প্রতি ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই গ্রামের কৃষক ইকবাল জানান, আমন ধান কাটার পরপরই তিনি জমি প্রস্তুত করে আলু লাগান। এবার তিনি ডায়মন্ড, এস্টারিক্স ও সানশাইন—এই তিন জাতের আলু চাষ করেছেন। তবে মিজান, বাবলু ও কামালের মতো অনেক কৃষকের কণ্ঠে ছিল শঙ্কার সুর। তারা জানান, এবার বীজের দাম কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও সারের সংকটের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বড় বিনিয়োগ ও ঝুঁকি মির্জাপুর ইউনিয়নের মাথাইল চাপড় গ্রামের বড় পরিসরের কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গত বছর ১৫০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে প্রায় ৭০ লাখ টাকার লোকসান গুনেছি। তবুও হাল ছাড়িনি। আশা করছি, এবার ফলন ও বাজার দর ভালো পেলে সেই লোকসান পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারব।
কৃষি বিভাগের বক্তব্য সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শেরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. ফারজানা আকতার বলেন, মৌসুমের শুরুতে সার নিয়ে কিছুটা জটিলতা থাকলেও প্রশাসনের তৎপরতায় তা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। কৃষকরা এখন পুরোদমে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়া পূর্বাঞ্চলের কিছু কৃষক যারা মৌসুমের শুরুতেই আগাম আলু রোপণ করেছিলেন, তাদের ফসল অল্প সময়ের মধ্যেই বাজারে আসবে। আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং শেষ পর্যন্ত বাজার দর ঠিক থাকলে শেরপুরের কৃষকরা এবার বাম্পার ফলন ঘরে তুলতে পারবেন, যা জাতীয় সবজি উৎপাদনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর