শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় চলতি বোরো আবাদে কৃষকদের সার সংকট মোকাবেলায় তৎপরতা বাড়িয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। এই উপজেলাটি বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ধান উৎপাদনে অন্যতম শষ্যভান্ডার হিসেবে বিখ্যাত। বর্তমানে এখানে সরকার নির্ধারিত মূল্যে কৃষকের মাঝে সার বিক্রি করা হচ্ছে এবং সরবরাহও স্বাভাবিক রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রায় প্রতি মৌসুমে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা সার সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সার সংকট তৈরি করেন। এতে কৃষকের ফসল উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সিন্ডিকেটের কারণে সময়মতো ন্যায্য মূলে সার না পেয়ে লোকসানে পড়তে হয় অনেক কৃষককে। তাই নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস বরাদ্দের সার পাচার, অতিরিক্ত দামে বিক্রি, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। ফলে বর্তমানে এ উপজেলায় সারের কোন সংকট নেই। তবে এই তৎপরতা অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, চলতি বোরো মৌসুমে ধানের আবাদ হবে ২৩ হাজার ২৬০ হেক্টর ও সরিষা ২১ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে। এসব ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে উপজেলায় ৫৫০ মেট্রিক টন ইউরিয়া, ৩০০ মেট্রিক টন টিএসপি, ১ হাজার ৪৯২ মেট্রিক টন ডিএপি এবং ১ হাজার ২৭১ মেট্রিক টন এমওপি সার মজুত রয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ডিলার পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চাহিদা মোতাবেক বিভিন্ন সার ক্রয় করেছেন কৃষকেরা। এ সময় কৃষি অফিস থেকে সার মনিটরিংয়েয়ে কঠোর ব্যবস্থাপনাও দেখা যায়। ডিলার পয়েন্টে নিয়মিত বরাদ্দের সার গুদামে নিশ্চয় করা, ক্যাশ মেমোসহ প্রকৃত কৃষকের মাঝে বিক্রি করছেন। এছাড়া নির্ধারিত মূল্য তালিকা ঝুলিয়া রাখা হয় নিশ্চিত করছে দায়িত্বরত উপ-সহকারী ইউনিয়ন কৃষি কর্মকর্তারা।
অপরদিকে, এই উপজেলা হতে পাশ্ববর্তী উপজেলা ও জেলা সদরে অবৈধভাবে সার স্থানান্তরের খবর পেলেই ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তা জব্দ করা হয়। গত ৩ ডিসেম্বর কাকরকান্দি ইউনিয়নের রাধারবাধ এলাকা হতে হালুয়াঘাট উপজেলায় পাচারের সময় ২০ বস্তা ডিএপি সার জব্দ করা হয়। সার পাচারের বিষয়ে সার বীজ মনিটরিং কমিটির মিটিং এ ডিলারদের কঠোরভাবে সাবধানও করে দেওয়া হয়েছে। উপজেলার মন্ডলিয়াপাড়া এলাকার কৃষক বাবুল মিয়া বলেন, “আমি এবার ২ একর জমিতে ধান চাষ করি। প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার সরকার নির্ধারিত মূল্যে কিনতে পেরেছি। পূর্বে অতিরিক্ত দামে সার কিনতে হতো, ডিলাররা অন্য উপজেলায় বিক্রি করে দিতো। এখন কৃষি অফিসে অভিযোগ দিলেই ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।”
নন্নী ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, “আমি সরিষা আবাদ করছি। সার দেওয়া ছাড়া ভালো সরিষা উৎপাদিত হয় না। কিন্তু আগে নির্ধারিত মুল্যে সার পেতাম না, অতিরিক্ত দামে কিনতে হতো। কিন্তু এবার সকল সার নির্ধারিত মূল্যে আমাদের কাছে বিক্রি হচ্ছে। এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।” এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান জানান, “সার ব্যবস্থাপনা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কোনো ডিলার অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। উপজেলা জুড়ে কৃষকদের মাঝে সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি নিশ্চিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই মুহূর্তে আমার উপজেলায় কোনো সার সংকট নেই। এছাড়া বরাদ্দকৃত আরও সার উপজেলায় আসবে।”
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর