আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এসেছে ফয়সাল করিম মাসুদের নাম। গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য ফয়সাল বিদেশ থেকে ফিরে ‘শুটার টিম’ গঠন করেন।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল হত্যার লক্ষ্য অর্জনের আগে হাদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করেন এবং মাত্র সাত দিনের মধ্যে হামলা চালানো হয়। হত্যার প্রায় ১২ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি দেশ ত্যাগ করেন এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ আলামত সরিয়ে ফেলে।
গোয়েন্দা তদন্তে আরও জানা গেছে, হাদি ও ফয়সালের পরিচয় হয়েছিল ইনকিলাব মঞ্চের কালচারাল সেন্টারে। শতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে, হামলার আগে শুটার কীভাবে ধাপে ধাপে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছিলেন।
হত্যার পরিকল্পনার ধাপসমূহ
৪ ডিসেম্বর: রাত ৮:১৮ মিনিটে ফয়সাল ও তার সহযোগী কবির বাংলামোটরের ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে আসেন। ছয় মিনিটের বৈঠকে ফয়সাল হাদির সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দেন। এটি ঘনিষ্ঠতা তৈরির প্রথম ধাপ।
৯ ডিসেম্বর: ফয়সাল আবার কালচারাল সেন্টারে আসেন, এবার সঙ্গে ছিলেন আলমগীর। নির্বাচনী প্রচারণার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয় এবং ফয়সাল হাদির টিমে ঢুকে পড়েন।
১০ ডিসেম্বর: সেগুনবাগিচায় হাদির প্রচারণায় অংশ নেন ফয়সাল।
১১ ডিসেম্বর: মিশন বাস্তবায়নের প্রস্তুতি, নরসিংদী, সাভার, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় রেকি। পশ্চিম আগারগাঁওয়ে বোনের বাসায় প্রস্তুতি।
হামলার দিন: ভোরে উবারে হেমায়েতপুরের একটি রিসোর্টে যান। সিসিটিভিতে দেখা যায় ফয়সাল ও আলমগীর গাড়ি প্রবেশ করেন। সেখানে ফয়সালের বান্ধবী মারিয়া ও তার বোন উপস্থিত ছিলেন। ফয়সাল হাদির একটি ভিডিও দেখিয়ে হত্যার পরিকল্পনা জানান।
সকাল ৮:৫৪ মিনিটে বান্ধবীকে বাড্ডায় নামিয়ে দেওয়ার পর ফয়সাল মোটরসাইকেলে হাদির সেগুনবাগিচার প্রচারণায় যোগ দেন।
হামলার সময়সূচি
* দুপুর ১২:২২ মিনিটে হাদি মতিঝিলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
* দুপুর ১২:৫০ মিনিটে হাদিকে বহনকারী অটোরিকশা জামিয়া দারুল উলুম মসজিদের সামনে পৌঁছায়।
* নামাজ শেষে দুপুর ২:১৬ মিনিটে হাদি রওনা দেন। শুটাররা অনুসরণ করেন।
* দুপুর ২:২৪ মিনিটে পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে হাদিকে লক্ষ্য করে দুটি গুলি ছোড়া হয়।
চিকিৎসা ও মৃত্যু
গুরুতর আহত অবস্থায় হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর শরিফ ওসমান হাদি মারা যান।
পরবর্তীতে তার মরদেহ দেশে আনা হয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির নিকটে দাফন করা হয়।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর