জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বর্তমানে একাধিক সংকট ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শীর্ষ নেত্রীদের পদত্যাগ, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পরপর বক্তব্য দলটির অভ্যন্তরীণ ঐক্য, আদর্শিক অবস্থান ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
নির্বাচনের আগে বড় পরীক্ষার মুখে এনসিপি
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এনসিপি কোন পথে হাঁটে- তা এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার বিষয়। নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত, আদর্শিক অবস্থান এবং সাংগঠনিক পুনর্গঠনই নির্ধারণ করবে দলটি এই অস্থিরতাকে রাজনৈতিক সম্ভাবনায় রূপ দিতে পারবে কি না। এনসিপি গঠনের শুরুতে নতুন রাজনৈতিক ধারার প্রতিশ্রুতি, নাগরিক রাজনীতি এবং বিকল্প নেতৃত্ব তৈরির যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সেই যাত্রাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। শীর্ষ নেত্রীদের প্রকাশ্য অবস্থান ও ভিন্নমুখী সিদ্ধান্ত দলটির সাংগঠনিক ঐক্য, নির্বাচনী কৌশল এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
দলীয় অবস্থান এখনও স্পষ্ট নয়
এনসিপির পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এসব ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে- এনসিপি কি আদর্শগত পুনর্গঠনের পথে যাচ্ছে, নাকি ভেতরের বিভাজন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটির পরবর্তী পদক্ষেপ, সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত এবং শীর্ষ নেতৃত্বের অবস্থানই নির্ধারণ করবে- জাতীয় নাগরিক পার্টি এই সংকটকে রাজনৈতিক সুযোগে রূপ দিতে পারবে কি না।
ডা. তাসনিম জারার পদত্যাগ
সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হলো- এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারার পদত্যাগ। শনিবার তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দল ছাড়ার ঘোষণা দেন। পদত্যাগের পর এনসিপির একটি অভ্যন্তরীণ অনলাইন গ্রুপে দেওয়া বার্তায় তিনি জানান, দেড় বছরের রাজনৈতিক যাত্রায় সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পদত্যাগের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডা. তাসনিম জারা নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৯ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি জানান, বাস্তবিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তিনি কোনো দল বা জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ার যে অঙ্গীকার তিনি জনগণের কাছে করেছিলেন, তা রক্ষা করতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথে হাঁটছেন।
এনসিপির তিন শীর্ষ নেত্রীর রহস্যজনক পোস্ট
ডা. তাসনিম জারার পদত্যাগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণার কাছাকাছি সময়ে এনসিপির আরও তিন শীর্ষ নেত্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেন। এসব পোস্ট দলটির ভেতরের অস্থিরতা ও মতাদর্শগত টানাপোড়েনের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন এক পোস্টে লেখেন, “আমরা লড়াই ছাড়ব না। আল্লাহ সহায়।”
যুগ্ম সদস্যসচিব নুসরাত তাবাসসুম লেখেন, “নীতির চাইতে রাজনীতি বড় নয়। কমিটমেন্ট ইজ কমিটমেন্ট।”
অন্যদিকে যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. মাহমুদা মিতু লেখেন, “এক পয়সা দিয়েও দেশি ভান ধরা পশ্চিমা গং বিশ্বাস করি না। এর চেয়ে যারা ওপেন বলে-কয়ে পশ্চিমা এজেন্ডার পক্ষ নেয় তাদের স্যালুট।”
এই পোস্টগুলো সরাসরি কারও নাম উল্লেখ না করলেও দলটির আদর্শিক অবস্থান, বিদেশি প্রভাবের অভিযোগ, নীতি ও রাজনীতির দ্বন্দ্ব—এসব বিষয়ে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের ইঙ্গিত বহন করছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর
এক্সক্লুসিভ এর সর্বশেষ খবর