• ঢাকা
  • ঢাকা, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ২ সেকেন্ড পূর্বে
নিউজ ডেস্ক
বিডি২৪লাইভ, ঢাকা
প্রকাশিত : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:৩০ দুপুর

কফি মুসলমানদের বিস্ময়কর আবিষ্কার

ছবি: সংগৃহীত

সকালের ঘুম জড়ানো চোখ খোলা থেকে শুরু করে সারা দিনের ব্যস্ত জীবনপ্রবাহে যার উপস্থিতি আমাদের ক্লান্তি দূর করে সতেজ করে তোলে, তার নাম ‘কফি’। এটি আজ শুধু একটি পানীয়ই নয়; বরং আধুনিক সভ্যতার এক অপরিহার্য অংশ। গোটা পৃথিবীতে তুমুল জনপ্রিয় এ পানীয় আবিষ্কারের গল্পটি অনেকেরই অজানা। মুসলমানদের হাত ধরে কফি কীভাবে আবিষ্কার হয় আর কীভাবে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে তা নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন-সৈয়দ এ. এফ. এম. মঞ্জুর-এ-খোদা

কফি আবিষ্কারের ইতিহাস

কফি মূলত মুসলমানদের একটি আবিষ্কার, যা পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। কফি আবিষ্কারের পেছনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রয়েছে, যা নিুরূপ-

ঘটনা-১

ইথিওপিয়াতে কালদি নামক একজন আরবীয় মুসলিম রাখাল বসবাস করতেন। আনুমানিক ৮৫০ খ্রিষ্টাব্দের ঘটনা। মেষ চরাতে গিয়ে তিনি একটি অদ্ভুত বিষয় লক্ষ করলেন। আর তা হলো-তিনি যখন সারা দিন মেষ চরিয়ে প্রচলিত রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরেন, তখন তার মেষগুলোর আচরণ স্বাভাবিকই থাকে। কিন্তু যখন তিনি জঙ্গলের মধ্য দিয়ে বাড়ি ফেরেন, তখন মেষগুলো অস্থির আচরণ শুরু করে, এমনকি বাড়ি ফিরেও এরা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকে ও উচ্চস্বরে ডাকাডাকি করে। এ বিষয়টি লক্ষ করে কালদির মনে বিশেষ কৌতূহলের জন্ম হলো। তিনি এ বিষয়টির কারণ খুঁজে বের করার জন্য মেষগুলোর গতিবিধি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। একদিন তিনি খেয়াল করলেন, জঙ্গল দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় মেষগুলো একটি নির্দিষ্ট ঝোপের উজ্জ্বল লাল রঙের জাম জাতীয় ফল (Berry) খাচ্ছে, আর ফলগুলো খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এরা আকস্মিকভাবে অনেক বেশি সতেজ ও প্রাণবন্ত হয়ে লাফ-ঝাঁপ দিচ্ছে এবং চঞ্চল হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে। এ বিস্ময়কর দৃশ্য দেখে কালদি নিজে ওই ফলটি বীজসহ খেলেন। আশ্চর্যের বিষয়! ফলটি খেতে ভীষণ তেতো হলেও এটি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কালদির সারা দিনের ক্লান্তি যেন মুহূর্তে দূর হয়ে গেল। তিনি এক অসাধারণ সজীবতা ও উৎফুল্লতা অনুভব করতে লাগলেন। কয়েক দিনের মধ্যে ফলটির এ আশ্চর্য গুণের কথা স্থানীয় অধিবাসীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে তারাও ওই ফলটি খাওয়া শুরু করল। কিন্তু ফলটির স্বাদ তেতো হওয়ায় তারা গরম পানিতে ফলটি ফুটিয়ে ওই পানি পান করত। ইথিওপিয়ায় আবিষ্কৃত সেই আর্শ্চযজনক ফলটিই ছিল আজকের ‘কফি ফল’।

ঘটনা-২

মরক্কোর অধিবাসী ‘সাজিলিয়া’ সুফি তরিকার প্রবর্তক হজরত শেখ আল সাজিলি (রহ.) [১১৯৬-১২৫৮ খ্রি.] সাধনা জীবনের শুরুতে মরক্কোর একটি পাহাড়ে ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্ন থাকতেন। সে সময় একাধারে ৪০ দিন তিনি দিনের বেলায় রোজা রাখতেন এবং রাতের বেলায় জিকির-আজকার ও মুরাকাবা (আল্লাহপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যে ধ্যান সাধনা) করতেন। এভাবে সারা দিন রোজা রাখা এবং রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করার কারণে তিনি প্রায়ই খুব ক্লান্তি অনুভব করতেন। এমতাবস্থায় তিনি তার ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করার উপায় খুঁজতে থাকেন। একদিন তিনি লক্ষ করলেন, পাহাড়ের আশপাশে যে পাখি রয়েছে, তারা সারা দিন খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায় এবং রাতের বেলায়ও তারা ঘুমায় না, বরং কিচিরমিচির শব্দে চারদিক মাতিয়ে রাখে। সারা রাত না ঘুমিয়েও পাখিগুলো সারা দিন সজীব ও সতেজ অবস্থায় ঘুরে বেড়ায়। বিষয়টি তাকে অত্যন্ত অবাক করে তুলল। অনেক ভেবেও তিনি এ রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারলেন না। এর কিছুদিন পর তিনি খেয়াল করলেন, সেই পাখিগুলো জামজাতীয় এক ধরনের ফল গাছে বসে আছে। এরা ওই গাছ থেকে ফল খাচ্ছে এবং খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এরা অনেক সজীব ও সতেজ হয়ে যাচ্ছে। এ দৃশ্য দেখার পর সাজিলি (রহ.) ওই গাছ থেকে ফল পেড়ে তা মুখে দিলেন, কিন্তু তিক্ততার কারণে ফলটি তিনি খেতে পারলেন না। তাই তিনি ফলটি আগুনে পুড়িয়ে পোড়া ফল পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি পান করলেন। পানীয়টি পান করার সঙ্গে সঙ্গে তার সব ক্লান্তি দূর হয়ে তিনি অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও চাঙা হয়ে উঠলেন। এরপর থেকে তিনি রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য নিয়মিত পানীয়টি পান করতে থাকেন। সাজিলি (রহ.) যে ফল থেকে পানীয়টি প্রস্তুত করেছিলেন, সেটিই ছিল ‘কফি ফল’। পরে সাজিলি (রহ.)-এর অনুসরণে তার ভক্ত-মুরিদ এবং মরক্কোর অন্যান্য সুফি-সাধকরাও রাত্রিকালীন ইবাদতে জেগে থাকতে এবং মনোযোগ ধরে রাখার জন্য কফি পান করা শুরু করেন। আর এভাবেই সুফি-সাধকদের হাত ধরে কফি পানের অভ্যাস স্থানীয় অধিবাসীসহ সমগ্র মরক্কোব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

কফির বিশ্বযাত্রা

কালদি এবং সাজিলি (রহ.)-এর দ্বারা প্রাথমিকভাবে কফি আবিষ্কৃত হলেও বহুদিন পর্যন্ত এটি ইথিওপিয়া ও মরক্কোর স্থানীয় পানীয় হিসাবেই পরিচিত ছিল। মূলত, কফির বিশ্বজয়ের প্রকৃত অধ্যায় শুরু হয় ইয়েমেনে। পঞ্চদশ শতাব্দীতে সুফি-সাধক এবং বণিকরা ইথিওপিয়া থেকে ইয়েমেনের বন্দরনগরী মোকাতে কফি নিয়ে আসেন। এখানেই প্রথম কফির পরিকল্পিত চাষাবাদ এবং পানীয় হিসাবে এর ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। বিশেষ করে ইয়েমেনের সুফি-সাধকরা রাত জেগে ইবাদত, জিকির ও মুরাকাবা করার জন্য কফি পান করতেন। তাদের খানকাহ থেকেই ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের মাঝেও কফি জনপ্রিয় হতে শুরু করে। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ইয়েমেন থেকে কফি পবিত্র নগরী মক্কা এবং মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রধান জ্ঞানকেন্দ্র মিশরের কায়রোতে পৌঁছে যায়। এ দুটি শহরেই বিশ্বের প্রথম ‘কাহওয়া খানা’ বা কফি হাউজের (Coffee House) জন্ম হয়। এ কফি হাউজগুলো শুধু কফি পানের স্থানই ছিল না; বরং এগুলো হয়ে উঠেছিল জ্ঞানচর্চা, সামাজিক যোগাযোগ ও ব্যবসায়িক চুক্তির প্রধান কেন্দ্র। এ ছাড়া মানুষ এখানে বসে দাবা খেলত, সুফি ভাবধারার আধ্যাত্মিক নাশিদ (গজল) শুনত আর বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাম্প্রতিক বিষয়াবলি নিয়েও আলাপ-আলোচনা করত। এ কফি হাউজগুলোতে এত বেশি জ্ঞান ও তথ্যের আদান-প্রদান হতো যে, এগুলোকে ‘মাদ্রাসাতুল হুকমা’ তথা জ্ঞানীদের বিদ্যালয় বলা হতো।

কফির বিশ্বজয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি আসে অটোমান সাম্রাজ্যের হাত ধরে। ষোড়শ শতাব্দীতে তুরস্কের কনস্টান্টিনোপলে (বর্তমান ইস্তাম্বুল) কফি পৌঁছানোর পর এটি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। ১৫৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ইস্তাম্বুলে একটি পাবলিক কফি হাউজ খোলা হয়। এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই তুরস্কের বিভিন্ন অঞ্চলে আরও অনেক কফি হাউজ গড়ে ওঠে। মক্কা ও কায়রোর মতো এ কফি হাউজগুলোও অটোমান সাম্রাজ্যের সব শ্রেণির মানুষের জমজমাট আড্ডা, সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চা, সংবাদ সংগ্রহ এবং রাজনৈতিক সচেতনতার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়।

সপ্তদশ শতাব্দীর শুরুতে ইতালির ব্যবসায়ীরা প্রথম বাণিজ্যিকভাবে কফিকে ইউরোপের মাটিতে নিয়ে আসেন। ইউরোপের মানুষ কফি পান করার পর তাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কেউ কেউ এর অসাধারণ উদ্দীপক গুণাবলিতে মুগ্ধ হয়, আবার কেউ ভাবতে থাকে, ‘এ আবার কেমন পানীয়, যা রাতের ঘুম কেড়ে নেয়!’ এরই ধারাবাহিকতায় ইতালির ভেনিসের কয়েকজন লোক কফিকে ‘শয়তানের পানীয়’ হিসাবে আখ্যা দিয়ে তা নিষিদ্ধ করার দাবি জানালেও খুব দ্রুতই কফি ইউরোপজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রথমে ইতালিতে, এরপর লন্ডন ও প্যারিসসহ ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে কফি হাউজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ইউরোপীয় রেনেসাঁ তথা শিল্প-সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের নবজাগরণের যুগে চিন্তার বিকাশে এ কফি হাউজগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরবর্তী সময়ে ইউরোপ থেকে কফি কালক্রমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

এভাবেই ইথিওপিয়ার মুসলিম রাখাল এবং মরক্কো ও ইয়েমেনের সুফি-সাধকদের হাত ধরে যে পানীয়টির যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা আজ বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে গেছে। আজকের আধুনিক বিশ্বের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির অপরিহার্য উপাদান ‘কফি’ আবিষ্কারে মুসলমানদের এ যুগান্তকারী অবদান সর্বদা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

কুশল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com