পরিবেশ সুরক্ষা ও কৃষি ব্যবস্থাপনায় টেকসই সমাধান দিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক উদ্ভাবন করেছেন একটি নতুন ধরনের চুলা। “বাউ বায়োচার চুলা” নামের এই চুলায় দৈনন্দিন রান্নার পাশাপাশি গবেষণায় ব্যবহারের উপযোগী বায়োচার উৎপাদন করা যায়।
বাংলাদেশ সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটি)-এর অর্থায়নে পরিচালিত এই গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাকৃবির প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান। গবেষক দলে রয়েছেন মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মফিজুর রহমান জাহাঙ্গীর, বিডি২৪লাইভ.কমের বাকৃবি প্রতিনিধি ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থী মো. আশিকুজ্জামান, মুহাম্মদ সোহান, পিএইচডি শিক্ষার্থী সুমন চন্দ্র মহন্ত এবং নেত্রকোনা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মো. আল নূর তারেক। প্রকল্পটির মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলায় পরিচালিত হচ্ছে।
গবেষকরা জানান, এই চুলায় ৩০০ থেকে ৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রান্না করা সম্ভব, একই সঙ্গে উৎপন্ন হয় উচ্চমানের বায়োচার। নিয়মিত কাঠ, কয়লা বা অন্যান্য জ্বালানি ব্যবহারকারী পরিবারগুলোর জন্য এটি একটি কার্যকর ও সাশ্রয়ী বিকল্প। প্রচলিত পদ্ধতিতে যেখানে বায়োচার উৎপাদনে বেশি খরচ হয়, সেখানে এই চুলা ব্যবহার করে প্রায় বিনা খরচে বায়োচার পাওয়া যায়।
প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান বলেন, বায়োচার হলো অক্সিজেনবিহীন পরিবেশে উচ্চ তাপমাত্রায় তৈরি বিশেষ ধরনের কয়লা। তিনি জানান, এই চুলায় উৎপাদিত বায়োচারে অজৈব কার্বনের পরিমাণ বেশি, যা কার্বন সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং ন্যানো বায়োচার তৈরির জন্যও উপযোগী।
তিনি আরও বলেন, এই বায়োচার ব্যবহার করলে কৃষিজমি ও গবাদিপশু থেকে নির্গত মিথেন গ্যাস কমানো সম্ভব, যা জলবায়ুবান্ধব কৃষি ব্যবস্থাপনায় সহায়ক হবে।
মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মফিজুর রহমান জাহাঙ্গীর বলেন, পরীক্ষাগার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই চুলায় উৎপাদিত বায়োচারে জৈব ও অজৈব কার্বনের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে। কৃষকরা রান্নার কাজের পাশাপাশি এই বায়োচার জমিতে সারের সঙ্গে ব্যবহার করতে পারবেন।
তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে বায়োচারের ব্যবহার জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে উচ্চ উৎপাদন ব্যয়ের কারণে এর ব্যবহার সীমিত ছিল। বাউ বায়োচার চুলা সেই সমস্যার কার্যকর সমাধান দিতে পারে।
গবেষক দলের সদস্য মো. আশিকুজ্জামান বলেন, চুলাটির নকশা প্রথমে সফটওয়্যারে তৈরি করা হয় এবং পরে স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করে কম খরচে বাস্তব রূপ দেওয়া হয়। পরীক্ষামূলক ব্যবহারে দেখা গেছে, এতে রান্না করতে কম সময় লাগে এবং জ্বালানি ব্যবহারও কম হয়। ব্যবহারকারীদের মতামত থেকেও এসব সুবিধার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পরীক্ষামূলক ব্যবহারকারী ময়মনসিংহের ভাবখালির আব্দুল হামিদ বলেন, “এই চুলাটি গ্রাম, শহর এবং চরাঞ্চল সব জায়গার জন্যই উপযোগী। কম জ্বালানিতে দ্রুত রান্না করা যায়।”
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার আরেক ব্যবহারকারী পারভীন বেগম বলেন, “এই চুলা ব্যবহারের পর আগের তুলনায় রান্নার সময় অনেক কমে গেছে এবং লাকড়ির প্রয়োজনও কম হয়েছে। এখন আমি নিয়মিত এই চুলাতেই রান্না করি।”
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর